অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম-২০২৪

এখন বর্তমান আধুনিক যুগে জমির খাজনা দেওয়ার জন্য আর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কষ্ট করে যেতে হবে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে https://ldtax.gov.bd  এই ওয়েবসাইটটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এখন থেকে বাড়িতে বসে থেকেই আপনার হাতে থাকা স্মাট ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে জমির খাজনা দিতে পারবেন। তো চলুন দেখে আসি অনলাইনে জমির খাজনা কিভাবে দেয় ? 


জমির খাজনা বলতে কি বোঝায় ? 

আপনি একজন বাংলাদেশের প্রকৃত নাগরিক।  আর বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যখন আপনি এদেশের জমির মালিকানা পাবেন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি ভোগ দখল করবেন এখন তখন আপনাকে সেই জমি ভোগ করার বিনিময়ে প্রতিবছর সরকারের নিকট নির্দিষ্ট পরিমাণ কর বা খাজনা প্রদান করতে হবে। 


আর আপনি আপনার জমির উপর ভিত্তি করে যে পরিমান ভূমি উন্ন কর বা খাজনা প্রদান করবেন, মূলত সে কর কে বলা হবে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর। আর এই খাজনার প্রচলন কিন্তু এখন থেকে নয়। বরং যখন জমিদার এর সময়কাল ছিলো তখন থেকেই খাজনা আদায় করার প্রচলন ছিলো।


বাংলাদেশ ভূখন্ড সৃষ্টির পরে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জমির খাজনা প্রচলিত ছিল। তবে ১৯৭৬ সালে ‘‘ভূমি উন্ন কর অধ্যাদেশ’’ জারি হওয়ার পর থেকে এটাকে ভূমি উন্নয়ন কর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশ একসময় ভূমি উন্নয়ন কর  প্রদানটা জটিল ছিল যা ভূমি অফিসে প্রদান করতে হতো।  তবে বর্তমানে ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।  আপনি ঘরে বসেই জমির খাজনা প্রদান করতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে।  চলুন জেনে নিই- অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম। 

বাংলাদেশে ২০২১ সাল পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/ উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে জমির খাজনা পরিশোধ করতে হতো। কখনো কখনো ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তথ্য হালনাগাদ করে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হতো। তবে বর্তমান বাংলাদেশ ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেন ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধুমাত্র অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করা যাবে।

জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম 

👉 আপনার জমি থাকলে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার ০২ (দুই) টি কৌশল রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
  • ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে
  • ভূমি উন্নয়ন কর মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে

অনলাইনে জমির খাজনা দিতে কি কি ডকুমেন্টস্ লাগে 

আগে জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য ইউনিয়ন/ উপজেলা ভূমি অফিসে অনেক কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি উপস্থিত হতে হতো। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধায় অল্প কিছু কাগজ/ ডকুমেন্টস্ সাথে নিয়ে নিজের মোবাইল অথবা কম্পিউটার দিয়ে ঘরে বসে অনলাইনেই জমির খাজনা দেওয়া যায়। সেগুলো হলোঃ 


১. সর্বশেষ রেকর্ড/ খারিজ খতিয়ান/ প্রস্তাবিত খতিয়ানের কপি
২. পূর্ববর্তী দাখিলা অর্থাৎ জমির খাজনার রশিদের কপি
৩. মৃত ব্যক্তির নামে খাজনা দিতে চাইলে ওয়ারিশন সনদ 
৪. পিতার নামে রেজিষ্ট্রি করা দলিল আছে কিন্তু পিতার নামে খারিজ নাই এবং পিতা মৃত হলে সমস্ত দলিলের রেফারেন্স 
৫. জাতীয় পরিচয় পত্র
৬. একটি স্মার্টফোন/মোবাইল নাম্বার ও ইন্টারনেট কানেকশন 
৭. জমির অবস্থান অনুযায়ী বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজার তথ্য

 

অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম-২০২৪

অনলাইনে জমির খাজনা দিতে হলে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর https://ldtax.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নাগরিক কর্নার অপশন থেকে রেজিস্ট্রেশন করুন। অতঃপর পেমেন্ট করুন- অপশনে প্রবেশ করে জমির ঠিকানা দিয়ে তথ্য বের করে নিন।  তারপর এনআইডি যাচাই করলে জমির খাজনা কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে তা দেখা যাবে। এবার খতিয়ানের বিস্তারিত পেজে ‘অনলাইন পেমেন্ট’ অপশন ক্লিক করে অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমে নির্বাচন করে পেমেন্ট করতে হবে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ধাপ-১- ভূমি উন্নয়ন কর মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন


ধাপ-২- নাগরিক কর্নার থেকে নিবন্ধন করুন

উপরের ইন্টারফেসটির নাগরিক কর্নার অপশন বাটনে ক্লিক করলেই নিচের ফরমটি চলে আসবে।

এখান থেকে মোবাইল নম্বর এবং সঠিক যোগফল দিয়ে নিচে থাকা ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’’ অপশনে ক্লিক করুন। তারপর আপনারর মোবাইলে Land.Gov.bd থেকে একটি ৬ সংখ্যার ওটিপি যাবে ওটিপি টি বসানোর পর পাসওয়ার্ড দিতে হবে। আর অবশ্যই মনে রাখবেন পাসওয়ার্ডটি ৮ সংখ্যা অথবা উর্দ্ধে ছোট হাতের, বড় হাতের ইংরেজি অক্ষর, অন্যান্য বিশেষ চিহ্ন (যেমন- *%).!/) দিয়ে সংরক্ষন করুন অপশনে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ-৩- একাউন্টে লগইন করুন

পাসওয়ার্ড সফলভাবে সেটাপ করা হয়ে গেলে পুনরায় লগইন করতে হবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নং ও জন্ম তারিখ দিয়ে ‘‘যাচাই ও হালনাগাদ করুন’’ এই অফশনে ক্লিক করে একাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে।

ভেরিপাই করার পর প্রোফাইল ৬০% দেখাবে ১০০% করতে ইমেইল আইডি ও বর্তমান ঠিকানা দিয়ে আপডেট করতে হবে।

ধাপ-৪- খতিয়ান বা দাখিলা সংযুক্ত করা 

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতির তৃতীয় ধাপে মেনুবার থেকে ‘খতিয়ান’ অপশেনে ক্লিক করুন। তারপরে আপনার জমির অবস্থান অনুযায়ী যথাক্রমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা নির্বাচন করুন।

পরবর্তী কাজ খতিয়ান নম্বর, হোল্ডিং নম্বর এবং খতিয়ানের ছবি তোলে আপলোড করতে হবে। মনে রাখতে হবে এখানে শুধু JPEG, JPG ও PDF ফাইল আপলোড করা যাবে।

এরপর মালিকানার ধরণ নির্বাচন করতে হবে। আপনি নিজেই জমির মালিক হয়ে থাকলে ‘নিজ নির্বাচন করুন’। আর জমির মালিক মারা গেলে ‘উত্তরাধিকার’ নির্বাচন করে ওয়ারিশ সনদ ও ওয়ারিশের তথ্য প্রদান করুন।

সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে লেখা হলে ‘সংরক্ষন করুন’ বাটনে ক্লিক করুন।

এখন আপনার এই খতিয়ানটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস/তওশীল অফিসে প্রদান করা হবে। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা/নায়েব সকল তথ্য যাচাই করে দেখবেন এবং জমির হোল্ডিং এন্ট্রি করবেন। এটি হতে মোটামুটি ৩-৪ কর্মদিবস সময় লাগে।

জমির হোল্ডিং এন্ট্রি না হওয়া পর্যন্ত আপনি ভূমি উন্নয়ন কর জমা দিতে পারবেন না। তাই তিন-চারদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ধাপ-৫- জমির খাজনা প্রদান   

আপনার খতিয়ানটি অনুমোদিত হলে মেনুবার থেকে ‘হোল্ডিং’ অপশনে গিয়ে দেখতে পারবেন। 

এখানে অনুমোদিত  লেখার পার্শ্বে ‘বিস্তারিত’ বাটনে ক্লিক করুন। এবার আপনি জানতে পারবেন আপনার মোট কত টাকা খাজনা/কর বকেয়া রয়েছে, কত বছরের জন্য বকেয়া আছে ইত্যাদি। আর যদি কোনো কারণ বশত আপনার হোল্ডিং এর তথ্য ভূল আসে, সেক্ষেত্রে আপনার খতিয়ান ও পূর্ববর্তী খাজনার রশিদ নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিস/তওশীল অফিসে যোগাযোগ করুন।   

অনলাইনে জমির খাজনা দিতে নিচে থাকা ‘‘অনলাইন পেমেন্ট’’ বাটনে ক্লিক করুন। 

অনলাইনে পেমেন্ট নির্বাচন করলে অনেকগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অপশন পাবেন। সেখােন থেকে আপনার কাঙ্খিত মাধ্যমটি নির্বাচন করে ‘এক-পে’/সরাসরি বিকাশ,নগদ,রকেট,উপায় এর মাধ্যমেও পেমেন্ট করতে পারবেন।
এ পর্যায়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর তথ্য অর্থাৎ মোবাইল নম্বর, মোবাইলে আসা ভেরিফিকেশন ওটিপি ও পিন প্রদান করে খাজনার টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।   

ধাপ-৬- ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রশিদ ডাউনলোড   

এতক্ষণে তো দেখলাম অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এবার ভূমি উন্নয়ন কর রশিদ ডাউনলোড করতে মেনুবার থেকে ‘দাখিলা’ অপশনে ক্লিক করবেন। 

তারপরে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করলে রশিদের প্রিভিউ দেখতে পারবেন। চাইলে সেখান থেকে এটি প্রিন্টও নিতে পারবেন অথবা ডাউনলোডও করতে পারবেন। 
পরামর্শ থাকবে, এই ভূমি উন্নয়ন কর রশিদটি প্রিন্ট করে নিজের কাছে রাখবেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে এটি কাজে লাগবে। 

জেনে নিন- বাংলাদেশে কত বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয় ?

বাংলাদেশের কৃষি জমির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়।  কারো ২৫ বিঘার অধিক আবাদি জমি থাকলে অতিরিক্ত জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা পরিশোধ করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক।

শেষকথাঃ অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম-২০২৪

বাংলাদেশের সীমানার অধীনে থাকা প্রত্যেক টুকরো জমির জন্য এর মালিকের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি মেনে খাজনা প্রদান করতে হবে। নিয়মিত এই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা নাগরিকদের একটি দায়িত্বও বটে। 


বাংলা সন হিসেবে ভূমি উন্নয়ন কর গণনা করা হয়। কেউ যদি একটানা তিন বছর জমির খাজনা পরিশোধ না করে তাহলে সরকার কর্তৃক সে জমি বাজেয়াপ্ত বা খাস করা হবে। 


আশা করি আজকের ব্লগ থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ঘরে বসে হয়রানি/ঝামেলা ছাড়াই কিভাবে জমির খাজনা দিতে হয়। সম্পূর্ন লিখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

‘ভূমি উন্নয়ন কর’’ বিষয়ক সম্বলিত যে কোনো ধরনের প্রশ্ন অথবা জিজ্ঞাসা থাকলে তা কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না। আমরা সর্বদা আপনাকে সহযোগিতা করতে চাই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url