প্রশ্ন--------------------------ঃ
অথবা, ‘‘বাঙ্গালি একটি সংকর জাতি- আলোচনা কর ।
অথবা, “বাঙ্গালি একটি সংকর জাতি”- যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাঙ্গালি নরগোষ্ঠীকে কেন সংকর জনগোষ্ঠী বলা হয়।
উপরে উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। তো চলুন দেখে আসি এগুলোর উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের অধিবাসীরা প্রধানত বহিরাগত এবং এ দেশবাসীর দৈহিক গরমে নানা নরগোষ্ঠীর প্রভাব বিদ্যমান। সুপ্রাচীন কাল থেকে এ অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মিলন ও মিশ্রণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। সার হার্বাট রিজলি, পন্ডিত বিরাজশঙ্গর গুহ, রমাপ্রসাদ চন্দ্র, নীহারঞ্জন রায় প্রমুখ পণ্ডিতগণ মনে করেন বাঙালি একটি নতুন মিশ্র জাতি বা সংকর জাতি। নিচে বাঙালি একটি সংকর জাতি এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
বাঙ্গালি সংকর জাতি
বিভিন্ন জাতির মিলন ও সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলিম অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।
১. অনার্য-আর্য নরগোষ্ঠী :
বাঙালি আদি মানব বা পুরুষের দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. প্রাক আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী;
খ. আর্য নরগোষ্ঠী।
অনার্য নরগোষ্ঠী বাংলার আদি নরগোষ্ঠী, উনার জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি হয় অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, আলোপীয়, মোঙ্গলীয়, নেগ্রিটো ও আরো কয়েকটি জাতির মিশ্রণে।
২. নেগ্রিটো :
বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রথম স্তর নেগ্রিটো জন। এরা খর্বাকৃতি, কালো বর্ণ, চুল উনবিৎ, খাটো, ঘেঁটি পুরু ও উল্টানো।
৩. অষ্ট্রিক বা অষ্ট্রালয়েড :
নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে অস্ট্রিক বা অস্ট্রলাইট গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে। এর নাম অস্ত্রলয়েড, অস্টিকদের নিষাদও বলা হয়। বাঙালি জাতিসত্তার সর্বস্তরে কম বেশি এ ভেন্ডিদের রক্তের খোঁজ পাওয়া যায়। সাঁওতাল, মুন্ডা, মালপাহাড়ি ইত্যাদি জাতি গোষ্ঠী অষ্টেলীয়ডদের অন্তভুক্ত।
৪. আলপাইন :
আলপাইন জাতি দ্রাবিড়দের পড়ে ভারতে প্রবেশ করে। বাঙ্গালি, গুজরাটি, মারাঠি,ওড়িশি জাতির পূর্বপুরুষদের অনেকেই আলপাইন গোষ্ঠীর লোক ছিল। এদের থেকে বাঙ্গালি জাতির বড় একটি অংশ সৃষ্টি হয়।
৫. দ্রাবিড় :
দ্রাবিড়রা এদেশের আদি অধিবাসীদের অন্যতম। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে বাংলাদেশে দ্রাবিড়রা প্রবেশ করে।
৬. মঙ্গোলয়েড :
বাঙালি জাতিসত্তার মিশ্রণে মঙ্গলইদের প্রভাব পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে এর জনগোষ্ঠীর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। গারো, চাকমা, মণিপুরী, খাসিয়া, মুরং, হাজং ইত্যাদি উপজাতি এ মঙ্গোলয়েডের অন্তর্ভুক্ত।
৭. নার্ডিক :
বাঙালি নৃ-মিশ্রণে অন্য জাতির নাম নার্ডিক। বাংলায় এদের অবস্থান পাওয়া যায়।
৮. আরব জাতি :
সপ্তম ও অষ্টম শতকে আরব জাতি বাংলায় আগমন করে। শাসক রুপে, ব্যবসায় বাণিজ্য করতে এদের বাংলায় আগমন ঘটে এবং পরবর্তীতে বস্তি স্থাপন করে স্থায়ীভাবে ও বসবাস করতে থাকে।
৯. ইউরোপীয় জাতি :
ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয়রা ১৬ শতকে বাংলায় আসে এবং বাঙালি জাতি গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে বাংলায় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর আগমন ঘটেছে এবং প্রয়োজনে তারা একত্রে বস্তি স্থাপন করে বাঙালি জাতিসত্তা গড়ে তুলেছে। এজন্য বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয়।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য, আকৃতি, গঠন, গায়ের রং প্রভৃতির ক্ষেত্রে বহুবিধ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। বাঙালি জাতির মধ্যে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট। অস্টিক, দ্রাবিড়, আলপীয় জনগোষ্ঠীর সাথে আর্য, মোঙ্গল, আরব ও তুর্কিদের সংমিশ্রনে বাঙালি জাতির উদ্ভব ঘটেছে। ‘রিজলে’ তার Tribes and caster of Bengal গ্রন্থে বলেন, বাঙালিরা মঙ্গল দ্রাবিড় প্রভাবিত এক সংকর জনগোষ্ঠী। সুতরাং বলা যায়, বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি সংকর জাতি হিসেবে বাঙালি জাতির পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রিয় পাঠক, ওপরের আলোতে ‘বাঙ্গালি কে সংকর জাতি বলা হয় কেন’ এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url