লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। লেবু পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। লেবু দিয়ে ভাত খাওয়া সহ আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আছে অনেক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লেবুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রূপ চর্চা থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত প্রায় সকল কাজেই লেবু ব্যবহার হয়।লেবু সাইট্রাস জাতীয় ফল।      

লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

সাইট্রাস ফলের মধ্যে ভিটামিন সি বেশি থাকে, এটি একটি প্রাথমিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা কোষকে ক্ষতিকারক ফ্রি র‍্যাডিকল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।  তো চলুন লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই। 

লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

উপকারিতাঃ
  • লেবুতে থাকে ভিটামিন 'সি', যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 
  • লেবু পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। 
  • সকালে এক গ্লাস লেবুপানি খেলে হজমশক্তি বাড়ে। 
  • লেবুপানি শরীরে ভিটামিন 'সি'র ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
  • লেবুপানি পানে লেবুতে থাকা উপকারী উপাদান ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সাহায্য করে।
  • গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও লিভার সুস্থ রাখে।  
  • ব্রণে লেবুর রস দিলে ব্রণ দূর হয়। 
  • লেবুর রস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 
অপকারিতাঃ
  • অতিরিক্ত লেবু গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে, তাই অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে 
  • এসিডিটির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে। 
  • বেশি পরিমানে লেবু ও লেবুর শরবত পান করলে পেটে ও তলপেটে ব্যাথা হতে পারে। 
  • বেশি পরিমানে লেবুর শরবত পান করলে শরীর দূর্বল লাগতে পারে। 
  • শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটানা লেবু খেলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুনের অভাব দেখা দিতে পারে।   

ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা 

ত্বকের যত্নে- লেবুর রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের কালচে দাগছোপ দূর করে। ত্বকের জৌলুস বাড়াতে সাহায্য করে লেবুর রস। স্কিন ডিটক্সিফিকেশনেও সাহায্য করে লেবুর রস বা লেবুজল। তাই বাড়িতে কোনও ফেসপ্যাক বা স্ক্রাব তৈরি করলে সেখানে মিশিয়ে নিয়ে পারেন লেবুর রস।
ত্বকে লেবুর উপকারিতাঃ
  • লেবু মুখের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে। 
  • লেবু মাথার খুসকি দূর করে। 
  • লেবুতে ভিটামিন সি আছে  যা অকাল বয়সের ছাপ দূর করে। 
  • লেবু আর বেকিং সোডা দিয়ে একসাথে মিশিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের হলুদভাব দূর হয় ও দাঁত ঝকঝক করে। 
  • লেবু ও লাল চিনি একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে ব্যবহার করলে ঠোঁটের মৃত কোষ দূর হয়।           
পুকুরধারে লেবুর তলে

থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে

ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই...।’

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর ‘কাজলা দিদি’, মোহাম্মদ নাসির আলীর ‘লেবুমামার সপ্তকাণ্ড’, নিজের পাতে দুপুরের খিচুড়ির সঙ্গে টাটকা লেবু—লিখতে বসে সবই এল। লেবুর মোহনীয় ঘ্রাণে আকুল হওয়ার দৃশ্যটা বোধ করি বাঙালি পরিবারের খাবার টেবিলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। লেবুর ব্যবহার আছে রূপচর্চায়ও। জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞ মতামত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল বলেন, সৌন্দর্যচর্চায় লেবুর সর্বোৎকৃষ্ট উপকার পেতে হলে লেবু খেতে হবে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে লেবুর অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। ফলে কোষের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া–বিক্রিয়ায় (কোষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত) স্বাভাবিক নিয়মে যে ক্ষতি হওয়ার, তা অনেকটাই কম হয়। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সহায়তা করে। তবে লেবুর রসমিশ্রিত প্যাক ত্বকে ব্যবহারের পর কারও কারও ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে দেখা যায়, কারও কারও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ও প্রদাহ হতে পারে। তাই এ ধরনের প্যাক ব্যবহার করতে চাইলেও কিছু বিষয়ে সতর্কতা আবশ্যক।

ত্বক ও চুলের যত্নে লেবু উপকারী, জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী। তিনি বললেন, মনে রাখতে হবে, লেবুর রস সাইট্রিক অ্যাসিড। তাই এর ব্যবহার না জেনে যেকোনো ধরনের ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ করা উচিত নয়। হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। বলিরেখাও পড়তে পারে। ত্বকের ধরন বুঝে নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে সুন্দর।

প্যাক হিসেবে পাতিলেবু ব্যবহার করাই ভালো। তবে এ লেবু সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই অন্য লেবুও কাজে লাগাতে পারেন। আফরিন মৌসুমী জানালেন রূপচর্চায় লেবুর সঠিক ব্যবহার।

ত্বকে লেবুর অপকারিতাঃ
ত্বকের যত্নে লেবুর উপকারিতা অনেক। কিন্তু কখনও ভুলেও লেবু মুখে মাখবেন না। এতে আপনার ত্বক পুরে যেতে পারে, কারণ লেবুর রস প্রচন্ড এসিডধর্মী। ত্বকে লেবু ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপাদোনের সাথে মিশিয়ে লেবু ব্যবহার করুন। 

গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

বর্তমান সময়ে শরীরের ওজন বাড়া নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। নানা কারণেই বাড়তে পারে শরীরের ওজন। সবাই চান সহজ পদ্ধতি ও কম সময়ে ওজন কমাতে। সেক্ষেত্রে অনেকের কাছেই পরিচিত একটি পদ্ধতি কুসুম গরম পানিতে লেবু দিয়ে পান করা। কিন্তু এভাবে পানি পানে কি আসলেই ওজন কমে?

এ বিষয়ে জানব ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মীর কাছ থেকে।

এই পুষ্টিবিদ জানান, ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে প্রথম কথা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা। কেউ যদি মনে করেন কেবল লেবুপানি পান করে ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবেন, সেটা সম্ভব নয়। সুষম খাবার, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি বিষয় মেনে চলার পাশাপাশি লেবুপানি পান করলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শরীরের বিপাকীয় হার বাড়াতে পারলে ওজন দ্রুত কমে। পানির মতো লেবুপানিও শরীরের বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে।

শরীফা আক্তার শাম্মী বলেন, আমাদের প্রায় সবারই সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি পান করার অভ্যাস রয়েছে। যারা ওজন কমাতে চান, তারা সকালে চা বা কফির পরিবর্তে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি শরীরের বিপাকীয় হার বাড়ায় এবং খাবার দ্রুত হজমে সাহায্য করে। আবার খালি পেটে লেবুপানি পান করলে ক্ষুধাও তুলনামূলক কম লাগে। ফলে খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমে। এভাবে শরীরে কম ক্যালরি প্রবেশ করে। এ ছাড়া লেবুপানি পান করার পর ব্যায়াম করলে ক্যালোরি ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ে। এভাবে লেবুপানি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

যারা ওজন কমাতে চান তাদের অনেকেরই মিষ্টি জাতীয় শরবত, সফট ড্রিংকসের প্রতি আকর্ষণ থাকে। ওজন কমাতে চাইলে তখন এসব পানীয় পরিহার করে লেবুপানি পান করতে পারেন। এতে তৃষ্ণাও মিটবে, আবার শরীরে ক্যালরিও কম প্রবেশ করবে।

গরম পানিতে লেবুর অন্যান্য উপকারিতাঃ
  • লেবুতে থাকে ভিটামিন 'সি', যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে লেবুপানি পান করলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরের কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি-র‍্যাডিকেল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। 
  • লেবু পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, অর্থাৎ দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিতে ভূমিকা রাখে।
  • সকালে এক গ্লাস লেবুপানি খেলে হজমশক্তি বাড়ে। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়।
  • লেবুপানি শরীরে ভিটামিন 'সি'র ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
  • লেবুপানি পানে লেবুতে থাকা উপকারী উপাদান ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন 'সি'র কোলাজেন ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে।
  • লেবুপানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে।
  • লেবুপানি পান করলে শরীর ও মন সতেজ থাকে এবং ক্লান্তিভাব কম হয়।  
সতর্কতাঃ
  • লেবুতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। সেই কারণে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের লেবুপানি পানে অসুবিধা হতে পারে। এক্ষেত্রে তারা লেবুপানি পান করা থেকে বিরত থাকবেন বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
  • অতিরিক্ত লেবুপানি পানে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এটি একটানা পান না করে বিরতি দিয়ে পান করা ভালো। দিনে দুইবারের বেশি লেবুপানি পান না করাই উত্তম।
  • লেবু পানিতে ভিটামিন 'সি'র পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এটি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে। তাই লেবুপানি পানের পর ভালোভাবে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।  

খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা  

অনেকেই সকালবেলা খালি পেটে গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খান। বাড়তি মেদ ঝরানোর আশায় তারা এমনটা করে থাকেন। কিন্তু এটি কি আসলেই উপকারী? সকালে খালি পেটে লেবু পানি খাওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজের কোনো ক্ষতি করছেন না তো?

আপনি যদি সকালবেলা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেয়ে থাকেন তবে কিছুদিন পর দেখতে পাবেন আপনার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ক্ষুধামন্দা, বমি, অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনিতে লেবু আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু সকালবেলা খালি পেটে খেলে উপকার নাও হতে পারে। লেবুতে আছে ভিটামিন সি, যা আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। কিন্তু সকালবেলা খালি পেটে লেবুপানি খেলে কী অপকারিতা দেখা দিতে পারে, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-   

দাঁত ও হাঁড়ে সমস্যাঃ 
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয় খেলে দাঁতের যে ক্ষতি হয় গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলেও দাঁতের সেরকম ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবুপানি খান তারা যদি দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ না করেন তাহলে দাঁতে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হজমে সমস্যাঃ
আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পেপসিন ভেঙে যায় খালি পেটে লেবুপানি পান করলে। পেপসিন আমাদের হজমে সাহায্য করে। এটি মূলত প্রোটিন হজম করতে সাহায্য করে। এদিকে সাইট্রিক এসিড আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। তাই হজম ঠিক রাখতে খালি পেটে লেবুপানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

অ্যাসিডিটি দেখা দিতে পারেঃ
আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন সি জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লেবু বা লেবুর রস যদি খেয়ে থাকেন তবে দেখা দিতে পারে অ্যাসিডিটি। সেইসঙ্গে হতে পারে বমি বা বমি বমি ভাব। পরবর্তীতে সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে। শুধু লেবুপানির কারণেই এই সমস্যা হয় না বরং অন্যান্য ডিটক্স ডায়েট ড্রিংকও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।

সোডিয়াম ও ইলেকট্রোলাইটের অভাব হতে পারেঃ
গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে তা আমাদের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। ফলে বারবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও শরীর শক্ত হয়ে যাওয়া, পেট ফেঁপে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বারবার প্রস্রাব হলে শরীরের সোডিয়াম ও ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় নানা রকম অসুস্থতা। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে খালি পেটে লেবুপানি পান করা এড়িয়ে চলুন।

রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ঃ  
আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো আয়রন। ভিটামিন সি আমাদের রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আয়রন যদি অতিরিক্ত হয় তবে তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি ক্ষতি হতে পারে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে চাইলে খালি পেটে লেবুপানি পান করবেন না।

লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা ও অন্যান্য 

মেদ কমানো ছাড়াও লেবুর খোসার রয়েছে আরও অনেক গুণ। কী কী উপকার করে লেবুর খোসা?
  • শরীর চাঙ্গা রাখে লেবুর খোসায় ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। 
  • চুল ভাল রাখতে ত্বকের যত্নে লেবুর রসের জনপ্রিয়তা থাকলেও, এই ফলের খোসা চুলের পরিচর্যাতেও সমান উপকারী।
  • স্যালাড বানাতে স‍্যালাডেও ব‍্যবহার করতে পারেন লেবুর খোসা। 
  • তরল সাবান বানাতে
স্বাস্থ্যের যত্নে নেয়, ত্বক ভাল রাখে, হজমক্ষমতা বাড়ায়, বাসন পরিষ্কার রাখে— পাতিলেবুর একই অঙ্গে বহু গুণ। এমন অনেক উপকারে লাগে যে, তা সত্যি অনেক সময়ে অবাক করে। পাতিলেবু নিঃসন্দেহে উপকারী। তবে এর খোসাও কম দরকারি নয়। লেবুর খোসায় ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপকারী প্রচুর উপাদান থাকে। লেবুর খোসা মেদ কমাতেও সাহায্য করে। কারণ এতে ডি লিমোনিন নামক এক ধরনের অ্যাসিড থাকে। যা বাড়তি মেদ পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তবে মেদ কমানো ছাড়াও লেবুর খোসার রয়েছে আরও অনেক গুণ। কী কী উপকার করে লেবুর খোসা?

লেবুর খোসায় ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কোনও বিষয় নিয়ে উদ্বেগে থাকলে, মন ভাল করতে ভরসা রাখতে পারেন লেবুর খোসায়। শরীরের যাবতীয় টক্সিন বার করে দিয়ে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

লেবুর খোসা খেলে সারবে যেসব রোগ  

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। লেবু খেতে অনেকে  পছন্দ করলেও এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না।  

গবেষণা বলছে, লেবুর রস ও খোসাও সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আর লেবুর খোসা খেলে বিভিন্ন রোগ ভালো হয়। 

  • তবে এখন প্রশ্ন হলো– লেবুর খোসা কীভাবে খাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই কীভাবে খাবেন লেবুর খোসা। 
  • লেবুর খোসায় ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, যা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, জিঞ্জিভাইটিসসহ একাধিক রোগ প্রতিরোধ করে। 
  • লেবুর খোসায় সাইট্রাস বায়ো ফ্লেভোনয়েড থাকে, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে লেবুর খোসা খুব ভালো কাজ করে। লেবুর খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বক থেকে টক্সিক বের করে দেয়।
  • লেবুর খোসায় সয়ালভেসস্ট্রল কিউ ৪০ ও লিমোনেন্স থাকে, যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে, ব্য়াকটেরিয়াল ও ছত্রাক সংক্রমণের প্রকোপ কমায়।
  • নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে শরীরে সাইট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
  • লেবুর খোসায় প্য়াকটিন নামে একটি উপাদান থাকে, এটি শরীরের ফ্য়াট বার্ন করে। 

চুলের যত্নে লেবুর রসের উপকারিতা ও অপকারিতা-লেবুর উপকারিতা চুলের জন্য  

চুলের যত্নে লেবুর রসের উপকারিতা- লেবুর রস চুলের জন্য দারুণ উপকারী। যেহেতু লেবুর রসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, এটি কোলাজেন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার জেরে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও লেবুর মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুলের ফলিকলকে উন্মুক্ত করতে সাহায্য করে।

লেবুর রয়েছে অনেক গুণ। ভিটামিন সি-এর উৎস এই ফলটি যেমন শরীর সুস্থ রাখে, তেমনি ত্বক ও চুলের যত্নে এর ভূমিকা রয়েছে। হেয়ার প্যাক হিসেবে লেবুর রস নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়। পাশাপাশি খুশকি দূর করতেও এর জুড়ি নেই। জেনে নিন চুলের যত্নে লেবুর ব্যবহার। 

মরা চামড়া দূর করতেঃ
টুকরা করা লেবু মাথার ত্বকে ঘষুন। ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি মাথার তালুর মরা চামড়া দূর করবে। পাশাপাশি চুলে নিয়ে আসবে চমৎকার সুগন্ধ।

চুল ঝলমলে করতেঃ
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল নিন। একটি আস্ত লেবুর রস মিশিয়ে তেলটি ফ্রিজে রাখুন। ঠাণ্ডা মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন চুল। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে চুল সিল্কি হবে।

খুশকি দূর করতেঃ
একটি লেবুর রস নিংড়ে পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথার তালুতে ও চুলে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। লেবুতে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান প্রাকৃতিকভাবে দূর করবে খুশকি।

তৈলাক্ত চুলের যত্নেঃ
অনেকের চুলের গোড়া থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসৃত হয়ে চুল তৈলাক্ত করে ফেলে। এই তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করে লেবু।

চুলের বৃদ্ধি বাড়াতেঃ    
চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করে লেবু। নারকেল তেল, জলপাই তেল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান নিয়মিত। ঝলমলে ভাব বাড়ার পাশাপাশি তাড়াতাড়ি লম্বা হবে চুল।

আগা ফাটা রোধ করতেঃ
লেবুর রস এবং জলপাই তেল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের আগায় লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ৩ সপ্তাহে একবার করে করলে আগা ফাটবে না।

চুল পড়া কমাতেঃ
লেবুর রস, ভিনেগার ও লবণের মিশ্রণ লাগান চুলে। চুল পড়া কমে যাবে।

কন্ডিশনার হিসেবেঃ 
লেবুর রস ও নারকেলের পানি সমপরিমাণ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন কন্ডিশনার হিসেবে। প্রাকৃতিকভাবে চুল ঝলমলে করবে এ মিশ্রণ। 

শেষ কথাঃ লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

উপরের আলোতে খুব ভালো ভাবে ‘লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা’ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই, এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এরকম আরো অনেক নতুন নতুন আর্টিকেল দেখতে চাইলে এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url