গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি- গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার এ সম্পর্কে। গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার সম্পর্কে জানতে পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম ও কার্যপ্রনালী এবং সঠিক প্রয়োগের নিয়ম সম্পর্কে না জেনে পশুকে সকল প্রকার ঔষধ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বাজারে নামে বেনামে  গবাদি পশুর প্রচুর ঔষধ পাওয়া যায়, যার অধিকাংশই গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে আশানুরূপ ফলপ্রসূ নয়। এছাড়াও গরুর ভিটামিন পাউডার বাজারে নকলের সয়লাব। 

গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার

গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে সফল হতে অবশ্যই খামার ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি সম্পর্কে  বিশদ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি দ্রুত মাংসবৃদ্ধিকরণ ঔষধ, রুচিবর্ধক ঔষধ এবং পরজীবি সংক্রমণনাশক ঔষধের কার্যপ্রণালী ও এর প্রয়োগ বিধি সম্পর্কে সবারই জানা একান্ত প্রয়োজন। 

ভূমিকা

গবাদি পশু পালন ও খামার ব্যবস্থাপনায় পশু ক্রয়ের পর একজন বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান দ্বারা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গরু কোনো রোগে আক্রান্ত কিনা তা নির্ণয় করতে হবে। গরু কোনো রোগে আক্রান্ত থাকলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে সুৃস্থ করে তুলতে হবে। কেননা রোগাক্রান্ত গরু কখনো পেট ভরে খেতে চায় না, যার ফলে পশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে এবং আশানুরূপ ফল দিতে ব্যর্থ হয়। 

পশুকে ডি-ওয়ার্মিং কর্মসূচির (Deworming Programme) মাধ্যমে কৃমিমুক্ত করাতে হবে। কারণ দেশের প্রায় ১০০% গরু বিভিন্ন পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এজন্য পশু ক্রয় করার পর অবশ্যই কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। পশুকে পরজীবি সংক্রমণমুক্ত রাখতে প্রতি ৩/৪ মাস পর পর কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত। 

গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম  ও প্রয়োগের নিয়ম

লাভজনক খামার ব্যবস্থাপনায় গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে নিচে আলোচনা করা হলোঃ 

কৃমি নাশক ঔষধের নামঃ মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে গরু ক্রয় করার পরপরই গরুকে কৃমিনশক ঔষধ দিতে হবে। কারণ স্থান পরিবর্তনের ফলে গরু কৃমি সংক্রমনের ঝুঁকিতে থাকে। আর কৃমি সংক্রমণের ফলে গরুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। 

ট্যাবলেটের নামঃ 
  • Levanid 1500 mg bolus (Acme) 
  • Navades 1500 mg (Navana)
  • Trox bolus 1500 mg (Chemist) 
  • Triclazol bolus 1500 mg (SK+F)
  • Tremacid 1500 mg bolus (Renata) 
  • Endex 1500 mg (Novartis) 
  • LT-vet 1500 mg bolus (Acme) 
সেবন বিধিঃ উপর যে কোনো একটি ঔষধ প্রতি ৮০-১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১ টি ট্যাবলেট খালি পেটে কলার পাতায় মুড়িয়ে বা গুড়ো করে পানি যোগে বা খাদ্যেল সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
 
ইনজেকশনের নামঃ 
  • Inj. Nitronex 30 ml x 1 vial (Renata) 
  • Inj. Oxynil 50 ml vail (Techno) 
  • Inj. Devonix 50 ml, 250 ml (Advance)  
প্রয়োগ বিধিঃ উপরের যে কোনো একটি কৃমিনাশক ইনজেকশন প্রতি ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ৫ মিলি পরিমাণ ঔষধ গরুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হবে। পশুকে ইনজেকশনের মাধ্যমে কৃমিমুক্ত করার সুবিধা হলো এতে পশুর রুচির পরিমান বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

ব্যাকটেরিয়া দূরীকরণ ঔষধের নামঃ গরুকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণমুক্ত করতে কিছু ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে যা ব্যাকটেরিয়া নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে। 

ট্যাবলেটের নামঃ 
  • Tab. Fasinex 900mg (Novartis) 
  • Tab. Flukenil 900mg (Renata) ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। 
সেবন বিধিঃ উপর যে কোনো একটি ট্যাবলেট প্রতি ৭০-৮০ কেজি ওজনের পশুর জন্য ১ টি ট্যাবলেট খালিপেটে সেবন করাতে হবে।  

উপরোক্ত ইনজেশন বা ফ্যাসিনেক্স বা ফ্লুকেনিল ট্যাবলেট দিয়ে পশুকে চিকিৎসা করার ১৫ দিন পর নিম্নে যে কোনো একটি কৃমিনাশক ঔষধ পুনরায় খাওয়াতে হবে। 
  • এন্ডোকিল ৬০০ মিগ্রা বোলাস (Endokil 600mg bolus, ACI) 
  • এলবেনসিড বোলাস ৬০০ মিগ্রা (Albencid bolus 600mg, Chemist) 
  • রালনেক্স ৬০০ মিগ্রা বোলাস (Ralnex 600mg bolus, Novartis) 
  • বেনাজল ৬০০ মিগ্রা বোলাস (Benazol 600mg bolus, Acme) 
  • পেরাক্লিয়ার ২৫০ মিগ্রা ট্যাবলেট (Peraclear 250mg Tablet, Techno) 
সেবন বিধিঃ উপরোক্ত যে কোনো একটি কৃমিনাশক ট্যাবলেট প্রতি ৭০-৮০ কেজি ওজনের পশুর জন্য ১ টি বড়ি খালিপেটে সেবন করাতে হবে।  
গরুর রুচি বর্ধক ঔষধঃ কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহারের ফলে পশুর সাময়িক রুচি কমে যেতে পারে এবং শরীরটা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই পশুর রুচি বর্ধনের জন্য নিম্নবর্ণিত ঔষধ খাওয়াতে হবে।     

রুচি বর্ধক পাউডারঃ
  • হারবো-টপ ২০ গ্রাম (Herbo-top, Doctors)   
  • জাইমোজেন পাউডার ১০ গ্রাম (Zymogen Powder 10gm, Chemist) 
  • জিজিম্যাক্স পাউডার ২০ গ্রাম (DG max 20gm, ACME) 
  • ডিবি-জাইম পাউডার ২০ গ্রাম (DB-Zyme 20gm Powder, Navana)   
  • স্টমাভেট পাউডার ২০ গ্রাম (Stomavet 20 gm Powder, Renara) 
  • এপিভেট ১০ গ্রাম (Appivet 10 gm, Techno) 
সেবন বিধিঃ উপরোক্ত যে কোনো একটি ঔষধ ১/২ + ০ + ১/২  প্যাকেট পাউডার ০৩ দিন পরিমাণমত পানির সাথে মিশিয়ে যে কোনো বোতলের সাহায্যে খাওয়াতে হবে।  

রুচি বর্ধক ট্যাবলেটঃ 
  • ট্যাবলেট এনোরা (Tab. Anora, ACME)  
  • রুমিক্স (Rumix bolus, Novartis)   
  • মিভিট বোলাস (Mivit bolus, Chemist) 
  • রেক্সন বোলাস (Rexon bolus, SK+F) 
  • রুমেনসল ভেট বোলাস (Rumensol vet bolus, Speed Care)
প্রয়োগ বিধিঃ উপরোক্ত যে কোনো একটি ট্যাবলেট ১ + ০ + ১ নিয়মে ০১ িমাস খাওয়াতে হবে। 

গরুর কৃমির ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম/ট্যাবলেট খাওয়ানোর নিয়ম     

কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-  
  • বেশি দূর্বল গরুকে কৃমিনাশক ঔসধ খাওয়ানো যাবে না। 
  • প্রচন্ড গরমে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো উচিত নয়। 
  • কৃমিনাশক ঔষধ খুব সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে এবং ঔষধ খাওয়ানোর ২-৪ ঘন্টা গরুকে অভুক্ত রাখতে হবে। ফলে ঔষধ দ্রুত ও সঠিকভাবে কৃমির উপর কাজ করে। 
  • সঠিক মাত্রায় ঔষধ  খাওয়াতে হবে। কম মাত্রায় ঔষধ খাওয়ালে কৃমি দমন হবে না, আবর মাতাতিরিক্ত বেশি খাওয়ালে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 
  • বিশেষঙ্গের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো কোম্পানির ঔষধ খাওয়াতে হবে। 
  • কৃমিনাশক ঔষধ ট্যাবলেট হলে তা কলাপাতায় মুড়িয়ে বা গুড়া করে পরিমান মত পানিতে মিশিয়ে পরিষ্কার বোতলে করে খাওয়াতে হবে। 
  • কৃমিনাশক ইনজেকশন হলে খুব সাবধানে ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিয়ে ভালো করে ম্যাসেজ করে দিতে হবে। 
  • সর্বোপরি যে কোনো ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। 

গরুতে ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহারের নিয়মাবলী (ভ্যাকসিন বা টিকাবীজ)

টিকাবীজ (Vaccine) হলো এমন একটি দ্রবন যা নির্দিষ্ট কোন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। আর এ জন্যই নির্দিষ্ট রোগের জিবানু দিয়েই এই টিকাবীজ (Vaccine) তৈরী করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা, প্রতিরোধের মেয়াদকাল, প্রয়োগের স্থান, ও সংরক্ষনের তাপমাত্রা বিভিন্ন হতে পারে। গরুর উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি রোগের Vaccine এর ব্যবহারবিধি তুলে ধরা হলো।
  • তড়কা (Anthrax)= ৪ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে চামড়ার নিচে ১ সিঃসিঃ করে বৎসরে ১ বার দিতে হবে। গর্ভবতী গাভী ৮ মাসের উপড়ে হলে দেওয়া যাবে না।
  • বাদলা (Black Quarter B/Q)= ৪ মাস বয়স থেকে শুরু করে ২.৫ বছরের মধ্যকার সকল গরুকে চামড়ার নিচে ৫ সিঃসিঃ করে ৬ মাস পরপর দিতে হবে।
  • গলাফুলা (Haemorrhagic Septicemia)= ৬ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে ২ সিঃসিঃ করে চামড়ার নিচে (Booster Dose/ Nex Within 15 Days) বছরে ১ বার দিতে হবে। গর্ভবতী গাভীকে দেয়া যাবে না।
  • ক্ষুরারোগ (FMD)= ৪ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে ৬ মাস পরপর (Booster Dose/ Nex Within 30 Days) ২ সিসি করে চামড়ার নিচে দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ।
  • জলতাঙ্ক (Rabies)= ৬ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে ৩ সিসি করে মাংশে বছরে ১ বার দিতে হবে। এই Vaccine (0 ডিগ্রী) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ।
নিয়মাবলীঃ-
  1. সর্বপ্রথম Vaccine এর মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
  2. ব্যবহারের পুর্বে ভায়াল ভালো ভাবে ঝাকিয়ে নিন যাতে সমভাবে মিশে যায়।
  3. টিকাবীজ (Vaccine) দেওয়ার উত্তম সময় হলো ভোর বেলা।
  4. কোন ভাবেই ভায়াল সুর্যের আলোতে বের করা যাবে না।
  5.  উৎপাদন থেকে ব্যবহার পর্যন্ত Vaccine ভায়াল সর্বদা Cool box অথবা ফ্লাস্কে সংরক্ষণ করতে হবে।
  6. জলাতাঙ্ক ব্যতিত প্রায় সব Vaccine -ই চামড়ার নিচে দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই যেন চামড়ার নিচে দেওয়া Vaccine মাংশ পেশীতে না ঢুকে।
  7. অসুস্থ গরুকে Vaccine দেয়া যাবে না।
  8. Vaccine ভায়াল খোলার এক ঘন্টার মধ্যেই ব্যবহার সম্পন্ন করতে হবে।
  9. ব্যবহার শেষে ভ্যাকসিনের ভায়াল ভেংগে ফেলা যাবে না। মাটির নিচে পুতে রাখতে হবে।
  10. ৪ মাস বয়সের নিচে কোন গরুর বাচ্চাকে Vaccine দেয়া যাবে না।
সতর্কতাঃ- টিকাবীজ Vaccine দেয়ার পর যদি কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাহলে দ্রুত এন্টিহিস্টামিন যেমন inj: ASTAVET 100kg/5ml হিসাবে মাংশে দিতে হবে।

কৃমিনাশক (Anthelmintics)
বাংলাদেশের আবহাওয়া কৃমির জন্য যথেষ্ট উপযোগী। যার জন্য গৃহপালিত পশু কমবেশি কোন না কোন কৃমি দ্বারা আক্রান্ত আছে। পরজীবি/বহিঃপরজীবি দ্বারা এ কৃমিরোগ হয়ে থাকে। নিয়মিত ও সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে এই কৃমিরোগ দমন করা যায়।

সবচেয়ে ভালো হয় গরুর মল (গবর) ল্যাবঃ এ পরীক্ষা করে, কোন কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তা নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা দেয়া।

পাতাকৃমি
কলিজার পাতাকৃমি
রক্তের পাতাকৃমি
রুমেন কৃমি
যেকোন গ্রুপ দেয়া যাবে তবে ট্রাইক্লাবেন্ডাজল গ্রুপ উত্তম। যেমন Tab: Fasinex 900mg.

গোলকৃমি
কেঁচো বা বড় গোলকৃমি
পাকস্থলীর গোলকৃমি
অন্ত্রনালীর গোলকৃমি
ফুসফুসেরর গোলকৃমি
সাধারনত গোলকৃমির ক্ষেত্রে লেভামিসল গ্রুপের ঔষধ উত্তম। যেমনঃ Tab: Ralnex 600mg.

ফিতাকৃমি
যেকোন গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার করলেই হয়।
উকুন, আঠালী, মাইট
inj: Ivermectin গ্রুপ উত্তম।

নিয়মাবলীঃ-
  • গরু কৃমিতে আক্রান্ত না থাকলেও নিশ্চিন্তে নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো যাবে। এতে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
  • ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য গরুকে সকালে খালি পেটে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • দানাদার খাবারের পানির সাথে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ালে কোন কাজ করবে না।
  • ট্যাবলেট গুড়া করে চিটাগুড় বা কলার পাতার সাথে মুড়িয়ে খালি পেটে খাওয়াতে হবে।
  • কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর পর কমপক্ষে ১ ঘন্টা কোন ধরনের খাবার দেয়া যাবে না।
  • কৃমিনাশক ঔষধ নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমান খাওয়ালেও কোন ক্ষতি হবে না। 
  • মাত্রার চেয়ে কম খাওয়ালে কৃমিতো মরবেই না বরং আরও সক্রিয় হবে।
  • গাভীর বাচ্চা দেয়ার কমপক্ষে ৪৫ দিন পর কৃমিনাশক ব্যবহার করুন কিন্তু এর আগে না।
  • প্রজনন করানোর ৪৫ দিনের মধ্যেও কৃমিনাশক ব্যবহার উচিত নয়। তবে তীব্র রোগের ক্ষেতে প্রজনন করানোর ৩০ দিন পর কৃমিনাশক ব্যবহার করা হয়।
  • অত্যন্ত গরম আবহাওয়ায় কৃমিনাশক খাওয়ানো যাবে না। যদি খাওয়াতেই হয় তাহলে খাওয়ানোর সাথে সাথে গরুকে ১০/১৫ মিনিটের মত সময় ধরে গোসল করাতে হবে ও ফ্যানের নিচে রাখতে হবে।
  • ৮ মাসের উপড় গর্ভবতী গাভীকে কৃমিনাশক খাওয়া উচিত নয় তবে তীব্র রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে
  • নিয়মিত ৩ মাস পর পর সকল গরুকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • সদ্য ভুমিষ্ঠ গরুর বাচ্চাকে জন্মের ৫/৭ দিনের মধ্যে পাইপারজিন গ্রুপের কৃমিনাশক পাউডার খাওয়াতে হবে। এবং ৬ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ১টি করে অ্যালবেন্ডাজল গ্রুপের ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। 
প্রতিবার কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর পর অবশ্যই মাত্রানুযায়ী লিভার টনিক খাওয়াতে হবে। কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর পর যদি খাওয়ার রুচি কম হয় তাহলে রুচিবর্ধক পাউডার/ট্যাবলেট খাওয়ালে দ্রুত রুচি ফিরে আসবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করুন। 

গরু মোটাতাজাকরণ ভিটামিন পাউডার

গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার । গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ । গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন অনেকেই খুঁজে থাকেন আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা জানার চেষ্টা করব গরুর মোটাতাজাকরণ ঔষধ খাওয়ানো ভালো নাকি প্রাকৃতিক খাদ্য খায় গরুকে মোটাতাজাকরণ ভালো ।

গরু মোটাতাজাকরণের জন্য আপনি এসিআই কোম্পানির ফ্যাট পাউডার দিতে পারেন এই পাউডার আপনি গরুর সাধারণ খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন এতে গরু অনেক বেশি মোটা তাজা হবে তবে এগুলো খাওয়ালে অনেকটা ক্ষতিও হতে পারে ।
পশুর শরীরে দ্রুত মাংস বৃদ্ধির জন্য ইউরিয়া মোলাসেস ও দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত ভিটামিন দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। বাজারে অনেক ডিবি-ভিটামিন পাওয়া যায়। তার মধ্যে যে কোনো একটি ব্যবহার করতে হবে। যেমন- 
  • গ্রোথটনিক পাউডার ১০০ গ্রাম (Growth Tonic Powder, Speed Care) 
  • সেবন বিধিঃ ২০-৪০ গ্রাম বা ৪-৮ চা চামচ প্রতিদিন দানাদার খাদ্য যোগে খাওয়ালে পশুর দ্রুত মাংস বাড়ে। 
  • বার্গা ফ্যাট টি-৩০০, ০১ কেজি (Burga Fat T-300, 01 KG, Doctors)  
  • সেবন বিধিঃ ৫০-১০০ গ্রাম বা ১০-২০ চা চামচ প্রতিদিন দানাদার খাদ্য যোগে খাওয়ালে পশুর দ্রুত মাংস বাড়ে। 
এছাড়াও নিম্নলিখিত আরও কিছু ভিটামিন পাউডার গরুর দ্রুত মাংস বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী। 
  • ভিটামিক্স ডিবি ১০০ গ্রাম, ১ কেজি 
  • এসকাভিট ডিভি পাউডার ১০০ গ্রাম, ১ কেজি 
  • ডিবি ভিটামিন ১০০ গ্রাম, ১ কেজি পাউডার 
  • মেগাভিট-ডিবি ১০০, ১০০০ গ্রাম পাউডার 
  • রেনাভিট-ডিবি ১০০, ১০০০ গ্রাম পাউডার 
  • ক্যালফোসটনিক ১০০ গ্রাম, ১ কিলোগ্রাম পাউডার 
সেবন বিধিঃ উল্লেখিত ঔষধের যে কোনো একটি ডিবি ভিটামিন ২০-৪০ গ্রাম বা ৪-৮ চা চামচ খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খাওয়াতে হবে।  

গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন 

অতিদ্রুত গরুর শরীরে মাংস বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এর পাশাপাশি টনিক জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম্নে যে কোনো একটি ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়। যদিও এই ঔষধগুলোর মূল্য একটু বেশি তবে কার্যকারিতা অত্যন্ত চমৎকার। 
  • ইনজেকশন- এ সল ১০০ মিলি ভায়াল (Inj. A-Sol vet 100 ml Vial, Acme) 
  • ইনজেকশন- ক্যাটাসল ৫০ মিলি, ১০০ মিলি ভায়াল (Inj. Catasol 50 ml, 100 ml) 
  • ইনজেকশন- ভিটাফস ৩০ মিলি, ৫০ মিলি, ১০০ মিলি ভায়াল (Inj. Vitaphos 30 ml, 50 ml, 100 ml Vial, Renata) 
প্রয়োগ বিধিঃ উপরের যে কোন একটি টনিক ইনজেকশন প্রতি ১৫ দিন অন্তর ১৫০-২০০ কেজি দৈহিক ওজনের পশুর জন্য ১০-২০ মিলি ঔষধ মাংসে বা শিরায় মোট ৩-৪ টি ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে। 

গরু মোটাতাজাকরণে অতিরিক্ত ইনজেকশনে ক্ষতিসমূহ 

চরাঞ্চল, ময়মনসিংহ ঘুরে : কোরবানি সামনে রেখে ষাঁড় গরু মোটাতাজা করতে এখনই ব্যস্ততা নেই। কোরবানির আগে ইনজেকশনে এক মাসেই মোটাতাজা হবে গরু।

ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে ঘুরে এমনটাই জানা গেলো।

এখানকার গৃহস্থরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় স্বল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করেন বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির ইনজেকশন ও পাউডার। এসব ওষুধ ইনজেক্টের ফলে মাত্র এক মাসেই স্বাস্থ্যবান হবে গৃহস্থের গরু, তা জানালেন খামারিরা।

ময়মনসিংহ সদর, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে কথা বলে জানা গেছে, ভেটেরিনারি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই শহরের বেশ কয়েকটি গবাদি পশুর ওষুধের দোকানে হাত বাড়ালেই মিলবে ইনজেকশন।

জানা যায়, কোরবানির ঈদে ময়মনসিংহের গরুর হাটগুলোতে স্থানীয় গরুর চাহিদা থাকে ব্যাপক। তুলনামূলকভাবে ভারতীয় গরু এখানকার হাট-বাজারগুলোতে কম উঠে। নিজেদের গরুর দরদাম বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গৃহস্থরা গরু তরতাজা করতে ‘ছোট ঈদের’ (ঈদ-উল-ফিতর) পর পরই শুরু করেন ব্যাপক প্রস্তুতি।

বছরজুড়ে স্থানীয় হাট-বাজার থেকেই কেনা ভূষি, খৈল, ঘাস ও খড় গবাদি পশুর স্বাভাবিক খাবারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকলেও কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগে গ্রামের গৃহস্থরা গরুর খাবারের রুচি বাড়ানোর নাম করে ব্যবহার শুরু করেন নানা ওষুধ।

এ সময়টাতে শহরের ওষুধপাড়ায় বিভিন্ন ফার্মেসীতে গবাদি পশুর ওষুধ বিক্রির মাত্রাও বেড়ে যায়। চাহিদা বুঝে বেশ কয়েকটি ফার্মেসি এ ধরণের ইনজেকশন ও ভিটামিনের জোগান বাড়ায়।

এখনই বিভিন্ন ফার্মেসিতে একমি গ্রুপের এ-সল ভেট, ভিটামিন এডিই, এফএনএফ গ্রুপের ক্যাটাসল, রেনেটা গ্রুপের ক্যাটাফস, টেকনো গ্রুপের মেটাফস, নোভার্টিস কোম্পানির মেগাভিট ডিভিসহ বিভিন্ন ইনজেকশন ও পাউডার বিক্রি হচ্ছে। এসবের দাম ১৮০ টাকা থেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত।

চরাঞ্চলে দেখা গেছে, লাভজনক হওয়ায় অনেক বিত্তবান কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু পালন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এই বিত্তবানরা গরু কিনে দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে ভাগি (বর্গা) দেয়। তবে তারা এ ব্যবসা করলেও সচরাচর প্রচার বা প্রকাশ করেন না।

ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে ময়মনসিংহ শহর সংলগ্ন চরাঞ্চলের চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া এলাকায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কৃষক ও দিনমজুর শ্রেণীর লোকের বসতি। কোরবানির ঈদে বাড়তি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে এ গ্রামের মানুষ কম দামে গরু কিনে মাস ছয়েক আগে থেকেই লালন-পালন শুরু করেন।

এ গ্রামের প্রায় ঘরে ঘরেই গরু। যাদের গোয়ালঘর নেই তাদের বাড়ির আঙিনাতেও ৩ টি থেকে ৫ টি গরু খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় দেখা গেছে। ঈদের আগে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করে তারা মুনাফাকে বাড়িয়ে তোলার ধান্ধা করেন।  

অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ভাটিপাড়া লাগোয়া গৌরীপুরের ভাঙনামারী ইউনিয়ন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উছাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর, রাজিবপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন চরের গ্রামগুলোতে।   

ভাটিপাড়া গ্রামের গৃহস্থ মোহাম্মদ আলী (৫০)। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ৬ মাস আগে তিনি দু’টি ষাঁড় গরু কিনেন। তিনি জানান, সাধারণ খাবারের পাশাপাশি দু’টি গরুকে প্রতিদিন দু’কেজি করে খৈল ও ভূষি খাওয়ানো হচ্ছে।

হাটে কোরবানির এ গরু তোলার এক মাস আগে ইনজেকশন দিতে হবে জানিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় এ বয়োবৃদ্ধ বলেন, ‘ঈদের এক মাস আগে ইনজেকশন দিমু। এতো গরু ফুলবো। গতবার বেচোনের আগে গরুরে ফুলার বড়ি খাইয়াইছিলাম। হেইবার ৩৫ হাজার টাকা গরু বেইচ্ছিল্যাম। ’

ইনজেকশনের পাশাপাশি চরাঞ্চলের গৃহস্থদের কাছে ‘বালতি’ হিসেবে পরিচিত নোভার্টিস কোম্পানির মেগাভিট ডিভি’র কদর বেশ। ভূষি এবং খৈলের সঙ্গে মিশিয়ে বড় গরুকে চার চামচ ও ছোট ষাঁড় গরুকে দু’চামচ করে এ পাউডার মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়ানো হয়।

একই এলাকার দরিদ্র কৃষক আবুল হাশেম (৪০) জানান, তার দু’টি গরু আছে। ঘাস, ভূষি ও খৈলের পাশাপাশি তিনিও ষাঁড় গরুকে স্বাস্থ্যবান করতে ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ইনজেকশন ও বালতি খাওয়াবেন।

গৌরীপুর উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের দুর্বারচর গ্রামের মুনসুরুল আমিন হেলাল (৩৫) জানান, তাঁর ৫ টি ষাঁড় গরু তিনি বাগিদারের কাছে দিয়ে রেখেছেন। ভূষির সঙ্গে খুদ (চালের ক্ষুদ্র অংশ) ও কচুরিপানা মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়ানো হচ্ছে। গরুগুলো মোটাতাজা করে হাটে তোলার জন্য তিনিও ‘বালতি’ (পাউডার) খাওয়াবেন বলে জানান।

তিনি জানান, বালতি খাওয়ালে গরু স্বাস্থ্যবান হয়। গজের মাংস বেড়ে যায়। ষাঁড় দেখে ক্রেতারা আকৃষ্ট হন। এখন সবাই এটা ব্যবহার করে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক রাসেল সরকার জানান, ‘শতকরা ৭০ শতাংশ কৃষক এখন গরু মোটাতাজা করতে ইনজেকশন ও বালতি পাউডার ব্যবহার করেন। এগুলোতে ক্ষতির কিছু নেই। এসব ভিটামিন জাতীয় ওষুধ। ডাক পড়লেই গ্রাম ঘুরে ঘুরে তিনি এসব ইনজেকশন গরুর মাংস পেশীতে পুশ করে দেন।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা শরাফত জামান বলেন, ‘গরুর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য গৃহস্থরা এসব ইনজেকশন ব্যবহার করেন। তবে মাত্রাতিরিক্ত এসব ইনজেকশন ব্যবহার করলে গরুর কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ’

তিনি জানান, কিছু কিছু প্রতারক বিভিন্ন নামি কোম্পানিগুলোর লেভেল ব্যবহার করে ক্ষতিকারক স্টেরয়েড জাতীয় হরমোনের ইনজেকশন বিক্রি করে। যা অনেক সময় গৃহস্থরা না বুঝেই ব্যবহার করেন। এ ধরণের ক্ষতিকারক স্টেরয়েড গরুর শরীরে পুশ করা হলে সেই গরুর মাংস মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।’ 

গরুর ক্যালসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ 


গরুর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে বাড়ন্ত গরুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে, পা বাঁকা হয়ে যেতে পারে যা রিকেট রোগ নামে পরিচিত। প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের অভাবে Osteomalacia অস্থিকোমলতা) রোগ দেখা দেয়। বাড়ন্ত গরুর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে সময়মতো দাঁতের বৃদ্ধি হয় না। 

অধিক পরিমাণে দুধ দেওয়া গাভীর মধ্যে প্রায়শই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভোগা গাভী বেশি দুধ দিতে পারে না। তাদের শরীর ঠান্ডা থাকে, ক্লান্ত দেখায় এবং দাঁড়াতে পারে না। এমন গাভী দুধ কম দেয়। চিকিৎসা না করালে এরা মারা যায়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রোধ করতে আপনার গাভীর শিং তুলে না ফেলে রেখে দিন। ঠান্ডার সময়ে গাভীকে কিছুটা সময় রোদে থাকতে দিন, যাতে তারা ভিটামিন ডি  তৈরি করতে পারে এবং বেশি করে ক্যালসিয়াম নিতে পারে। গাভীকে ভুট্টা, শিমজাতীয় গাছ এবং ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ গাছের পাতা খাওয়ান। তাদের পানীয় জলে অথবা খাবারের মধ্যে খনিজ মিশিয়ে দিন। দুধ দোহানোর পর প্রতিটি গাভীকে এক ঝুড়ি সবুজ ঘাস খেতে দিন। 

#অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ব্যবহারের কুফলঃ
ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় দুধ উৎপাদনে এছাড়া হাড় উৎপাদন ছাড়া সামান্য ব্যবহার হয়। ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত " মিল্ক  ফিভার " রোগটি দেখা যায় শুধুমাত্র বাচ্চা দেবার সামান্য পুর্বে অথবা সামান্য পরে।

মিল্ক ফিভার হলে গরু কিছুই খায়না,এছাড়া  কিছু লক্ষন আছে যাহা আমরা জানি,শরীর খাবার থেকে যে ক্যালসিয়াম সিনথেসিস করে তা শরীরে শোষনের জন্য ভিটামিন- ডি প্রয়োজন,এই জন্য সার্বক্ষনিক ছায়াযুক্ত স্হানে অবস্হান কারী গাভীতে খুব বেশী মিল্ক ফেবার দেখা যায়।(এজন্য গাভীকে বা গবাদিপশু কে বাহিরের  রোদে একটু হাটানো গেলে এই সম্যসা একটু কম হবে)। অবশ্য কখনও কখনো অল্প দুধের দেশী গরুর যার অনেকগুলো বাচ্চা হয়ছে তারো মিল্ক ফেবার দেখা যায়। 

লেখার উদ্দেশ্য ইদানিং গাভীর দুধ বাড়ানোর জন্য খামারী ভাইয়েরা লিকুইড ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমানে খাওয়ায় সব গাভীর সমস্যা না হলেও আপনি খামারে যেয়ে দাড়ানো অবস্হায় গাভী দেখলে বলতে পারবেন কোন গাভীকে মুখে ক্যালসিয়াম খাওয়ানো হয়।

তাদের পিঠ ধনুকের মত বাকা হয়,এবং  মাংস পেশী কোন কোন গাভীর এত শক্ত হয় যে ২ ইন্চির বেশী পা বাড়াতে পারেনা,

কারনঃ থিওরিটিক্যাল যেমন রক্তে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অনুপাত ১২ঃ৬ এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অনুপাত ২ঃ১। যেহেতু ক্যালসিয়াম বেশী খাওয়ানো হয়ছে,তাই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম পেশী ম্যাগনেসিয়াম টেনে নিয়ে ব্লাডে কনজুগেশন করেছে ফলে মাংসপেশীতে ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতি হয়ে হাইপোম্যাগনেসেমিক টিটেনি করেছে ফলে পায়ের মাংস পেশী শক্ত হয়ে গাভী হাটতে পারছেনা। 
গর্ভবতী গাভীকে যখন লিকুইড ক্যালসিয়াম খাওয়ালে তার মাংশ পেশী ফুসফুস শক্ত হয় ফলে গাভীর উঠতে কষ্ট হয়,গ্রাম্য চিকিৎসক রা  তখন ঘাটতি মনে করে আরো ক্যালসিয়াম ইনজেকশন করে ফলে উঠাতো দুরে থাক গাভী শক্ত হয়ে যাওয়ায় এক পাশে কাত হয়ে পড়ে যায় একেই বলে হাইপারক্যালসেমিয়া। প্রায়ই এধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।  

তাই আমি মনে করি  যখন তখন মনে ধরলেই গাভীতে  ক্যালসিয়াম প্রয়োগ না করাই উওম।

গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশনের নাম ও ক্যালসিয়াম খাওয়ানোর নিয়ম

ক্যালসিয়াম স্যান্ডোজ ইনজেকশন (Calcium Sandoz Injection) ক্যালসিয়ামের অভাব (হাইপোক্যালসেমিয়া) চিকিৎসা করতে সাহায্য করে যদি আপনি আপনার খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পান।

গবাদি পশুকে ২০০-৫০০ মিলি শিরায় খাওয়ান । প্রয়োজন অনুযায়ী ৮ থেকে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে ডোজ পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে। পশুর অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। পুনরায় চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

গর্ভবতী গাভীকে ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দেয়া ও মুখে খাওয়ানোর যৌক্তিকতা কি??

আমি অনেকদিন যাবৎ দেখছি কিছু লোক গর্ভবতী গাভীকে মুখে ক্যালসিয়াম খাওয়ান।আমার স্বল্প জ্ঞানে এর কোন ব্যাখ্যা পেলাম না।কেউ যদি পারেন ব্যাখ্যা টা দিলে কৃত্জ্ঞ হবো।

একবার একজন সিনিয়র এবং আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন চিকিৎসক গর্ভবতী গাভীকে মুখে চক পেন্সিল গুড়া করে নিয়মিত খাওয়াতে বললেন।তথ্যটা নতুন মনে হওয়ায়,আমি ব্লাড এন্ড হ্যান্ডার সনের ও মার্কস ম্যানুয়াল নিয়ে বসলাম।শেষ পর্যন্ত এই তথ্য পেলাম যে,মুখে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করলে শরীরে ক্যালসিয়াম উৎপাদন বন্দ্ধ হয়ে যায়।পরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ বন্দ্ধ করলে গরু মিল্ক ফেবারে বেশী আক্রান্ত হয়। 
খাবারের ভিতর ক্যালসিয়াম আছে যাহা শরীর গ্রহন করে,এই ক্যালসিয়াম শরীর শোষন করে ভিটামিন ডি এর সাহায্যে।তাই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে শরীর ক্যালসিয়াম শোষন করতে পারে না।যেমন প্যানক্রিয়াসের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সের বেটা সেল ইনসুলিন তৈরি করে,এই ইনসুলিন রক্তের মাধ্যমে কোষে কোষে যায়।আমরা যে খাদ্য খায় তা হজম হয়ে সরল আকারে কার্বোহাইড্রট জাতীয় উপাদান শরীর শোষন করে এবং এই কার্বোহাইড্রেট রক্তের মাধ্যমে কোষে কোষে যায় এবং ইনসুলিন কোষের পর্দাকে পাতলা করে যাতে কার্বোহাইড্রট বা সুগার কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে।এই সুগার গ্লাইকোসাইড চক্রের বিপাক হয়ে অঞচ তৈরি করে যাহা এনার্জি হিসাবে শরীরের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে।ইনসুলিন না তৈরি হলে সুগার কোষে ঢুকতে পারেনা এবং রক্তে সুগার বাড়ে ফলে ডায়াবেটিস ম্যালিয়েটাস রোগ ধরা পড়ে।

অনুরুপভাবে ক্যালসিয়াম যতই খাওয়ান ভিটামিন ডি না থাকলে শরীর ঐ ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে পারে না।

গরু খাদ্যের সাথে ভিটামিন ডি এর প্রিকারসর( ঢ়ৎবপঁৎংড়ৎ) গ্রহন করে যাহা থেকে সুর্যের আলোর সাহায্যে সিনথিসিস হয়ে ভিটামিন ডি তৈরি হয় এবং এই ডি ছাড়া শরীর ক্যালসিয়াম এ্যাবসরপ( শোষন) করতে পারেনা। এই সুর্যের আলো হলো সকালে কাচা রোদ। এই জন্য যে সমস্ত গাভী ঘরে আটকানো থাকে বা সারাদিন ছায়াযুক্ত স্হানে থাকে তাদের ক্যালসিয়াম ঘাটতি তথা মিল্ক ফেবারে আক্রান্ত হবার প্রবনতা বেশী থাকে।

যাহোক গর্ভবতী গাভীকে ক্যালসিয়াম খাওয়ানো প্রসংগে আসি, গর্ভবতী গাভীর পেটের বাচ্চার হাড় গঠনে সামান্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন যাহা গাভীর খাদ্যের মাধ্যমে পাওয়া উপাদান থেকে সিনথিসিস করে উৎপাদন করে,যার জন্য বাড়তী ক্যালসিয়াম দেবার প্রয়োজন নেই।

মুখে ক্যালসিয়াম খাওয়ালে, এই বাড়তী রক্তে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অনুপাতের তারতম্য সৃষ্টি করে। ফলে বাড়তী ক্যালসিয়ামের সাথে কনজুগেশন করার জন্য শরীরে বিভিন্ন জায়গায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে চলে আসে,এমনকি মাংসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও রক্তে চলে আসে,ফলে মাংসে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়,ফলে হাইপোম্যাগনেসেমিক টিটেনি রোগ ডিভলপ করে।

ফলে গরুর মাংস পেশী টিটেনাসের মত শক্ত হয়ে যায়।জয়েন্ট শক্ত হয়ে, জরায়ু ও জরায়ুর পাশের মাংস শক্ত হয়ে জরায়ু বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়।গরুর শুতে উঠতে কষ্ট হয়। শিং এবং চুটের মধ্যবর্তী স্হান সংকুচিত হয়।ঘাড় শক্ত হয়ে যায়,শ্বাস কষ্টও হয়।গাভী ডেলিভারী হবার পর,শরীর পাতলা হয়ে যায়,তখন গাভী আর উঠতে পারে না। 

এই মুহুর্তে মালিক ও কোন কোন চিকিৎসক আদ্যোপ্রান্ত না ভেবে মিল্ব ফেবার হিসেবে ভুল চিকিৎসা দেয়।তখন গরু আরো শক্ত হয়ে যায়।ফলে গরু পড়েই কার্ডিয়াক এরেষ্ট হয়ে মারা যায়।

এখানে চিকিৎসকের লক্ষ করা প্রয়োজন যে মিল্ক ফেবারে গাভী খাওয়া বন্ধ করে। কনভালশন থাকলে প্রথমে তাপ বাড়ে, পরে নরমাল শেষে সাব নরমাল হয়ে যায়। কিন্তু ক্যালসিয়াম খাওয়ানো গরুর কনভালসন থাকেনা,তাপ ১০৩--১০৪ ডিগ্রি থাকে, খাবার খায়।

চিকিৎসকের মনযোগীতার অভাবই রোগ নির্নয়ে ব্যাথর্তার কারন। 

এই অবস্হা থেকে পরিত্রান পেতে এস আর এগ্রো এনেছে সহজ সমাধান।যা আপনার মিল্ক ফেবার প্রতিরোধ,গর্ভবতী অবস্হায় বলের মত সন্তানের নাড়ী বের হওয়া প্রতিরোধ,দুধ বেশী হোয়া,গাভী বাচ্চার স্বাস্হ্য ভাল রাখা বিকলঙ্গতা প্রতিরোধ করে।ফুল আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

সর্বোপরী বাছুর জন্মের পর দ্রুততম সময়ে আবার ডাকে আসা এবং গর্ভধারন হারও বৃদ্ধি করে। বাচ্চা দেবার পর যথাসময়ে ডাকে না আসলে খামার টিকায়ে রাখা কোন খামারীর পক্ষে সম্ভব না। তাই।  এস আর ভিটা- এ ডি ই বি  -১০০/২০০/৫০০/১০০০ গ্রাম

যাতে আছে ৪ টা ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম এমন অনুপাতে যা পাল দেবার পর থেকে বাচ্চা দেবার পুর্ব পর্যন্ত আপনার গাভীকে মাসে ১৫ দিন প্রতিবারে ২৫ থেকে ৫০ গ্রাম করে খাওয়ান,লাভজনক খামার গড়ে তোলেন।যা অত্যন্ত সাশ্রয়ী,সহজলভ্য ও খাবারের সাথে খাওয়ানো যায়।

গরু মোটাতাজাকরণে ইন্ডিয়ান ওষধ/ভারতীয় ঔষধ

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গরুর দ্রুত বৃদ্ধি ও মাংস উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করতে বেশকিছু ট্যাবলেট ব্যবহার করে। যেমন- ডেক্সামেথাজন বা ডেকাসন বা ওরাডেক্সন ইত্যাদির যে কোনো একটি ঔষধ ৫ টি ট্যাবলেট প্রতিদিন খাওয়ানো হলে দ্রুত গরুর স্বাস্থ্য বাড়বে। দিন দিন গরু ফুলে উঠবে। কিন্তু ক্ষতিও আছে গরুর।  

কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটা তাঁজা করনে ব্যস্ত ঝিনাইদহের খামারীরা পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে হাজার হাজার গরু মোটা তাজা করনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যেই ঝিনাইদহের কোরবানীর পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেছে। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জেলার বারবাজার,গান্না বাজারে কোরবানীর পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেই সাথে সাধারন ক্রেতাদের ও ভীড় করতে দেখা যাচ্ছে। কোরবানীর ঈদের গরু ও ছাগল কেনা বেঁচা শুরু হয়েছে।

আবার খামার গুলোতে চলছে পশু হৃষ্টপুষ্ট করনের কাজ। দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাঁজা করছেন তারা। অনেক খামারি কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ করার আশা করছেন। মোটা তাজা করনের বিষয়ে খামারি বাদে ও গ্রাম এলাকায় অনেকে বাড়তি লাভের আশায় একের অধিক গরু ও ছাগল পালন করে থাকে। তারা বিভিন্ন মেডিসিন খাওয়ায়ে মোটা তাঁজা করছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে ভাল দাম পাবার জন্য। একেক টি বড় খামারে ২০ থেকে ৫০টি গরু এবং ছোট খামারে ৫ থেকে ২০টি গরু মোটা তাঁজা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এসব খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলার খামার গুলোতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মোটাতাজা করা হচ্ছে নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহীওয়াল জাতের গরু। খামারী মহিদুল ইসলাম জানায়, গত বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এক একটি গরু কিনে চার থেকে ছয় মাস লালন পালন করে দুটি দেড় লাখ বিক্রি করেছিলেন।

মোটাতাঁজা অরে অনেক ভাল দামে বিক্রি করতে পরেছিল। এসব গরু মোটাতাজা করতে কোন ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেয়া হয় না। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খামার গুলোতে নজরদারী রাখা হচ্ছে যাতে করে ক্যামিক্যালের মাধ্যমে কোরবানির পশু মোটা তাঁজা করা না হয়। খামারীদের দাবি দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে কোরবানির পশু রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে ভারত বা অন্য কোন দেশ থেকে যদি পশু আমদানি করা হয় তাহলে হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় খামারীরা। এবছরও সমপরিমান কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার অনুপাতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু মজুদ রয়েছে খামারিদের কাছে।

কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা গবাদী পশু গুলোকে ঘাষ, খড়, খৈল, ভুষিসহ দেশীয় খাবারের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। অনেকে খামারি না হয়ে ও নিজ বাড়িতে ২/৪ টা গরু লালন পালন করে থাকে এবং বিভিন্ন মোটাতাঁজা করনের ট্যাবলেট খাওয়ায়ে থাকে। এসব ট্যাবলেট খাওয়ালে গরু ফুলে থাকে দেখলে মনে হয় অনেক মাংশ হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রয়ের সময় যে টার্গেট নিয়ে কোরবানি দেওয়া হয় সে পরিমান মাংশ হয় না। অবশ্য এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। অনেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় স্থানীয় ভাবে দলগত ভাবে ট্রাকে করে গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলি বা চট্রগ্রাম নিয়ে বিক্রি করে থাকে।

আবার বাইরে থেকে অনেক ব্যাপারি বারবাজার,কালীগঞ্জ ও গান্না বাজার থেকে তাদের পছন্দমত গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এরা এখন গরু কিনে নিয়ে ঢাকা বা চট্রগ্রাম এলাকায় মজুত করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করবে এমন তার্গেট তাদের রয়েছে। বড় বড় ব্যাপারিরা ট্রাক ভর্তি করে গরু নিয়ে যাচ্ছে। খামারীরা জানান, কোরবানীর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততই কালীগঞ্জ এলাকার পশুর হাট গুলোতে গরু কেনাবেঁচা জমে উঠতে শুরু করবে। তাই গরু মোটাতাজা করতে খামারীদের ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। খামারীরা তাদের গরু বিক্রি করতে শুরু করেছে। আবার কেউ কোরবানি ঈদ সামনে করে বিক্রি করবে বেশি দামের আশায়। দেশিয় ছোট গরু কিনে বিভিন্ন পদ্ধতি মোটাতাঁজা করে থাকে। ক্রেতারা বলছে এবছর গরুর দাম এখনই অনেক বেশি। সামনে আর ও বেশি হবে এমন আশঙ্কা করছে। অন্যদিকে গরু মোটা তাজাঁকরণের নিষিদ্ধ ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওষুধের ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে। সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধুরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ খাওয়ানো গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ ঢুকে।

এতে কিডনির সমস্যাসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ওষুধ খেয়ে গরু গুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মোটাতাঁজার বিপরীতে অনেক গরুর মৃত্যুু হচ্ছে। এতে লাভের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেক খামারি। অনেকে বাংলাদেশি ভিটামিন খাওয়ায়ে মোটাতাঁজা করছে। আবার কেউ ভারতীয় ওষুধ দিয়ে মোটাতাঁজা করছে। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার এলাকায় মাঝদিয়া গ্রামের ঘোষপাড়ায় অনেকেই ৮ থেকে ১০ টি গরু মোটাতাঁজা করন করেছে। তারা এবার কোরবানি ঈদে বিক্রি করবে এমন আশা রয়েছে। কিছু খামারির ধারণা পশু মোটাতাজা করতে সহায়ক হয়। তবে তারা এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানেন না। আবার অনেক খামারি জেনেই এ পন্থা অবলম্বন করছেন। যাতে পশু মোটাতাঁজা হলে কিছু বাড়তি টাকা পান।

গরুর উকুন/আটালি মারার ঔষধ   

গরুর উকুন/আটালী ক্ষুদ্রাকায় রক্তচোষা প্রাণী। গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীর শরীর থেকে রক্ত চুষে বেঁচে থাকার পাশাপাশি এরা বংশবিস্তার করে মারাত্মক রোগ ছড়ায়। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, হরিণ, বাঘ, সাপ, ভাল্লুক, শিয়াল, সিংহ, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি প্রাণীর শরীরে বহিঃপরজীবী হিসেবে আঠালী বাস করে। 

মানুষসহ অধিকাংশ প্রাণীতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া আঠালীর মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে গবাদি পশুতে বেবিসিয়োসিস, এনাপ্লাসমোসিস, থাইলেরিয়াসিস ইত্যাদি রোগের কারণ এই আঠালী। আঠালীর লালা থেকে প্যারালাইসিস বা টিক টক্সিকোসিস নামক রোগও হতে পারে। উল্লেখ্য একটি আঠালী ২৭/২৮ দিনে তার শরীরের ওজনের ৫০গুণ রক্ত শোষণ করতে পারে যার পরিমাণ প্রায় ৩ সি.সি. অর্থাত্ দৈনিক প্রায় ০.১০ সি.সি।

আঠালী সব ঋতুতেই দেখা যায় তবে গরম ও বর্ষাকালে প্রদুর্ভার ও জন্মহার বেশি। এদের রক্ত শোষণে প্রাণীতে রক্ত শূন্যতা, চর্মরোগ দেখা দেয়। দুগ্ধবতী গাভীর দুধ অর্ধেকের নিচে নেমে আসে। চামড়ার গুণগত মান কমে যায়।

পৃথিবীর সব দেশে আঠালী থাকলেও বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এদের দেখা যায়, তবে রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে বেশি।
আটালী দু প্রকার।

১. শক্ত আটালী ও
২. নরম আটালী।

কিছু কিছু আঠালী গবাদি পশুর চামড়ার সাথে কামড় দিয়ে লেগে থাকে এবং কিছু আঠালী রক্ত খেয়ে রাতের বেলা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, বাঁশ অথবা পাটকাঠির বেড়ার ভাজে লুকিয়ে থাকে। শোষণকৃত রক্ত শেষ হলে কয়েক দিনের মধ্যেই আবার গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদির গায়ে উঠে আবার রক্ত চোষা শুরু করে। এসময় এরা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা দেয় যাকে বলে নিম্প। এখানে উল্লেখ্য যে, একটি স্ত্রী আঠালী প্রায় ১০০০ ডিম দিয়ে মারা যায়।

দমন ব্যবস্থা: কওমাফস (এসানল), ডায়াজিনন (নিওসিডল) নামক কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পশুর শরীর ধুয়ে দিতে হবে।

আবার আইভার মেকটিন (আইভোমেক) ইনজেকশন চামড়ার নিচে ১ সি.সি প্রতি ৫০ কেজি ওজনের জন্য পুশ করতে হবে এবং ১৫ দিন পর একই মাত্রায় আবার দিতে হবে। অন্যান্য দেশে প্রতিষেধক টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা হলেও আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। তবে কাক, বক, শালিকসহ বিভিন্ন পাখি আঠালীকে খেয়ে কিছুটা দমন করে থাকে।

গরুর চর্ম রোগের চিকিৎসা 

গরুর শরীরে যদি চর্মরোগ থাকে তাহলে নেগোটক্স পাউডিার (Negotox Powder, Chemist) ব্যবকহার করা যেতে পারে। 

ব্যবহার বিধিঃ নারিকেল তেল অথবা ভ্যাসলিনের সাথে মিশিয়ে ৫-৭ দিন দিলেই ভালো হয়ে যাবে। 
 
গরুর লাম্পি রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
১৯২৯ সালে আফ্রিকার ‘জাম্বিয়া’ প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিস্তীর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গরুর গায়ে প্রথমে পক্সের মতো বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো গায়। এই রোগে গরু মরে না। তবে রোগটি হয়ে ফোড়া ফেটে যাওয়ার পর ঘন ঘন ড্রেসিং না করলে এবং পশুর যত্ন না নিলে গরু মারা যায়। গরুর লাম্পি রোগ আসলে গরুর স্কীন রোগ বা চর্ম রোগ।

গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের কারন হলো এলএসডি ভাইরাস। এলএসডি গরুর জন্য একটা ভয়ংকর ভাইরাস বাহীত চর্মরোগ যা খামারের ক্ষতির কারণ।

লাম্পি রোগের কারণ
মূলত এল এস ডি ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। কারন এটি ছোঁয়াচে রোগ। লাম্পি ও গোট পক্স একই ধরনের রোগ।

লাম্পি রোগের সময়
সাধারনত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার করে ঠিক সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

লাম্পি রোগের লক্ষণ
এলএসডি আক্রান্ত গরু লক্ষণ শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে :

» আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়।
» জ্বরের সাথে সাথে মুখ দিয়ে এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝ স্থান পানি জমে যায়।
» শরীরের বিভিন্ন জায়গা চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়ে।
» ক্ষত মুখের মধ্যে, পায়ে এবং অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
» ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরে কোথায় ফুলে যায় যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয়, পুঁজ কষানি বের হয়।
» পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।

লাম্পি রোগ কিভাবে ছড়ায়ঃ

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যমগুলো হচ্ছে :

» মশা ও মাছি : এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসাবে মশা মাছিকে দায়ী করা হয়। অন্যান্য কীট পতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
» লালা : আক্রান্ত গরুর লালা খাবারের মাধ্যমে অথবা খামারে কাজ করা মানুষের কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে।
» দুধ : যেহেতু আক্রান্ত গাভীর দুধে এই ভাইরাস বিদ্যমান থাকে তাই আক্রান্ত গভীর দুধ খেয়ে বাছুর দুধ খেয়ে আক্রান্ত হতে পারে।
» সিরিঞ্জ : আক্রান্ত গরুতে ব্যবহার করা সিরিঞ্জ থেকে এই ভাইরাসবাহিত হতে পারে।
» রক্ষণাবেক্ষণকারী : খামারে কাজ করা মানুষের পোশাকের মাধ্যমে আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
» আক্রান্ত গরুর সিমেন : ভাইরাস আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন এই রোগের অন্যতম বাহন, কারণ আক্রান্ত গরুর সিমেনেও এই ভাইরাস বিদ্যমান থাকে।
» শুধুমাত্র গরু মহিষ আক্রান্ত হয়, মানুষ হয় না।

প্রতিকারে কৃষক সচেতনতা ও করণীয়ঃ
যেকোন রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার সব সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।

» আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেয়া। আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে রোগটির প্রাদুর্ভাব কম দেখা গেছে তাই এই রোগের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়।
» খামারের ভেতরের এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যেন মশা মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
» আক্রান্ত খামারে যাতায়াত বন্ধ করা এবং আক্রান্ত খামার থেকে আনা কোনো সামগ্রী ব্যবহার না করা।
» আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা মশা মাছি কামড়াতে না পারে। কারণ আক্রান্ত গরুকে কামড়ানো মশা মাছি সুষ্ঠু গরুকে কামড়ালে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
» আক্রান্ত গভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেয়া।
» আক্রান্ত গরুর পরিচর্যা শেষে একই পোশাকে সুষ্ঠু গরুর মধ্যে প্রবেশ না করা।
» আক্রান্ত গরুর খাবার বা ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুষ্ঠু গরুর কাছে না আনা।
» ক্ষতস্থান টিনচার আয়োডিন মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার রাখা।

এলএসডি রোগের চিকিৎসা
এলএসডি আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

গরুর লাম্পি রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। এই রোগে গরু মরে না। তা ছাড়া ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। সারাদেশে এই রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। মহাখালী থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে সারাদেশে।

গরু মোটাতাজা করন নতুন নিয়মেঃ   
 
প্রতিটি পরিবার কিংবা ব্যক্তির একক বা একমুখী রোজগারে সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেই বাড়তি একটা কিছু করতে চায়, কিন্তু সুযোগ হয় না কিংবা হলেও কি করবে, তা খুঁজে পায় না।

মোটাজাতকরণের জন্য গরু কিনতে গিয়ে কয়েকটি দিক খেয়াল রাখতে হবে, যেমন:

১) ১ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে গরু কিনতে হবে (১২-১৫ মাস বয়সের গরু মোটাজাতকরনের জন্য ভালো)

২) গায়ের চামড়া ঠিলা-পাতলা, পাঁচরের হাড় চেপ্টা, পায়ের মোট এবং শুধু মাত্র খাবারের অভাবে যে সব গরু শুকিয়ে গেছে এমন গরু কম মূল্যে কিনতে হবে।

৩) মনে রাখতে হবে গর্ভবতী গাভীকে ইউরিয়া মিশ্রিত খড় খাওয়ানো যাবে না। নির্বাচিত গরুকে প্রকল্প মতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া মিশ্রিত খড় খাওয়ানোর পূর্বে কিছু চিকিৎসা দিয়ে উপকুক্ত করে নিতে হবে।

ক. গরুর শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে সে স্থানে ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে নেগোভোন মলম লাগিয়ে প্রয়োজনে ব্যাণ্ডেজ করে রাখতে হবে, যাতে ক্ষত স্থানে মশা-মাছি কিংবা ময়লা জমতে না পারে।
খ. ক্ষত গভীর হলে তা না শুকানো পর্যন্ত আবার পরিস্কার করে মাঝে মধ্যেই মলম ব্যবহার করতে হবে।
গ. ক্ষত সেরে যাওয়ার পর গরুর গায়ের সেসব পরজীবী যেমন-উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদি মুক্ত করতে হবে।

নিয়মাবলীঃ
একটি গরুর জন্য নিউসিডল বা এনোসটোল পাউডার ১০ কেজি পানিতে ২.৫ চা চামচ মিশাতে হবে। তারপর বাসতি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে প্রথমে ভালোভাবে নাক-মুখ বেঁধে কান, চোখ, মুখ ছাড়া শরীরের সর্বত্র ওষুধ মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে কানের ভেতর, চোখের চতুপারর্শ্বে, নাক, মুখ লেজের গোড়া, শরীরের সঙ্গে পায়ের সংযোগস্থলসহ সকল সংকীর্ণ জায়গায় লাগাতে হবে। ওধুষ লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিস্কার পানি দ্বারা শরীরের সর্বত্র ভালোভাবে ধুয়ে ওষুধমুক্ত করতে হবে। ওষুধ লাগানোর ২/১ দিন পর যদি দেখা যায় ভালোভাবে বাহিত্যক পরজীবী মুক্ত হয়নি তবে ১৫ দিন পরে আবার একই নিয়মে ওষুধ লাগাতে হবে।

সর্তকতাঃ
১. যে ব্যক্তি ঔষুধ লাগাবেন, তিনি গরুর শরীরের ক্ষতস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কারণ এই ঔষুধ বিষ জাতীয়।
২. গরুর শরীরে ক্ষতস্থানকে (যদি ভালোভাবে না শুকিয়ে তাকে) এড়িয়ে ঔষদ প্রয়োগ করতে হবে।
৩. গরুকে ঔষুধ প্রয়োগের পর ভালোভাবে গোসল করিয়ে উক্ত স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হবে কারণ গরু স্বভাবত ঔষুধ লাগা ঘাস বা পানি খেয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
অভ্যন্তরীণ পরজীবী মুক্ত করণঃ 
১. গোল কৃমি   
২. কলিজা বা পাতা কৃমি।

১. গোল কৃমি
গোল কৃমি মুক্ত করতে নিচের যে কোন একটি ঔষুধ ব্যবহার করা যায়
মেনাফেঙ্ পাউডার = ১ প্যাকেট ১টি গরুর জন্য
অথবা নেমাফেক্স বড়ি = ৩টি বড়ি একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুর জন্য = ২টি বড়ি মাঝারি ও ছোট বাছুরের জন্য
অথবা কোপেন পাউডার = ১টি প্যাকেট একটি গরুর জন্য
অথবা রিনটাল পাউডার = ৭.৫ মি গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য
বিঃদ্রঃ রিনটাল পাউডার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল কারণ এই ঔষুধে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের কৃমি মারা যায়। গোল কৃমির ঔষুধ খাওয়ানোর পরে সবল গরু ৩ দিন এবং অন্যান্য গরুর ক্ষেত্রে ৭দিন অপেক্ষা করে তবে পাতা কৃমির ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে।


২. কলিজা বা পাতা কৃমি মুক্তকরণের নিয়মাবলী
চামড়ার নিচে টোডাক্স ইনজেকশন করতে হবে। মাত্রা সাধারণভাবে ২/৩ সিসি প্রাপ্তবয়স্ক গরুর জন্য। মোটাতাজা করতে হলে ঙ্গ সিসি পরিমান ইনজেকশন করতে হয়। এই ঔষুধ প্রয়োগের ৩ দন অপেক্ষা করার পরে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে। টোডাঙ্ ইনজেকশন ৭ দিন পর পর ২ বার দিতে হবে এবং তখন খাবার বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নাই। গরুকে প্রদানের জন্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ তৈরির নিয়মঃ

১. নং মিশ্রণ
ক. তিলের খৈল = ৪ কেজি
খ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
গ. গমের ভূষি = ৪ কেজি
ঘ. যে কোন ডালের ভূষি = ৪ কেজি

২নং মিশ্রণ
ক. গম ভাঙ্গা =৪কেজি
খ. তিলের খৈল = ৪ কেজি
গ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
ঘ. ডাল ভাঙ্গা, খেসারি = ৪ কেজি
কৃমি দূর করার পরে গরুকে ইউরিয়া মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।

গরুকে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।
১। আঁশ জাতীয় খড় খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে
২। দানাদার জাতীয় খাদ্যের সাথে সরাসরিভাবে এবং
৩। ইউরিয়া মোলাসেস বুকের মাধ্যমে

খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়মঃ
খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ১০ কেজি খড় ১০ কেজি পানি এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া বায়ুরোধী বড় বাঁশের ডোল (পাত্রবিশেষ) বা ইটের তৈরি হাউজে ৭-১০ দিন আবদ্ধ বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দিতে হবে।

তারপর ঐ খড় বের করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ইউরিয়া তীব্র গন্ধ কিছুটা কমে আসে। এই খড় গরু প্রথমে না খেলে কিছুটা চিড়াগুড় মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে (২০০-৫০০ গ্রাম) গরুকে প্রথমে দৈনিক ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়।

দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গবাদি পশুর দৈনিক খাদ্যের তালিকা।

১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা।
ধানের খড় = ২ কেজি
সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
দানদার খাদ্যে মিশ্রন = ১.২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
লবণ = ২৫ গ্রাম

দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

১৫০ কেজি ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকাঃ

খড় = ৩ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম

১৫০-২০০ কেজি ওজনের পশুর খাদ্য তালিকাঃ

ধানের খড় = ৪ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম

মোটাতাজা করনের গরুকে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার (খড়, কাঁচা ঘাস) এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। গবাদীপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রদানে কিছু কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।

১। এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
২। কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
৩। গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
৪। অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
৫। ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।

এই খবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর হেমাটোপিন বিএস (১০এমএল) ইনজেকশন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

উল্লেখিত তিনটি পদ্ধতির মধ্যে খড়ের প্রক্রিয়াজাত করে ইউরিয়া খাওয়ানো সহজ, ব্যয় কম এবং ফল ভালো আসে। এই প্রকল্পগুলো বিভিন্ন বয়সী হতে পারে। যেমন ৩ বা ৪ মাস মেয়াদি। নির্ভর করছে খামারি কেনা গরুটি কি রকম মোটা করে কি দামে বিক্রি করবেন। দাম বেশি চাইলে প্রকল্প মেয়াদ দীর্ঘ হবে এবং কম চাইরে প্রকল্প মেয়াদ স্বল্প হবে। তবে অনেকেই ঈদের বাজারকে চিন্তা করে তার ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রকল্প শুরু করেন।

তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

গরু মোটাতাজাকরণের প্রয়োজনীয় তথ্যঃ    
বাংলাদেশে কোরবানির মূল উপাদান হচ্ছে গরু। আর সেটা যদি হয় মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস তবে আনন্দের সীমা থাকে না। এ উপলক্ষকে সামনে রেখে যারা গরু মোটাতাজাকরণে আগ্রহী তাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। এজন্য দরকার গরু মোটাতাজাকরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা। এটি কখন ও কিভাবে করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো-

অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২-৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটির গুরুত্ব হচ্ছে- দরিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য থেকে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা।

গরু মোটাতাজাকরণের আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের পশু বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুজাফফর হোসেন জানান-
প্রয়োজনীয় উপাদান, পদ্ধতি ও মোটাতাজাকরণের সঠিক সময় : বয়সের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৪-৬ মাসও লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কোরবানি ঈদের কিছুদিন আগ থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।

স্থান নির্বাচন : খামার স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে। হ খোলামেলা ও প্রচুর আলো-বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে। খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেমন- পানি, মলমূত্র, আবর্জনা ইত্যাদি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সম্প্রসারণের সুযোগ থাকতে হবে।

গরু নির্বাচন : উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অধিক লাভজনক। ২-২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভালো। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সঙ্গে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভিজা ভিজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাঁজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাঁড়া সোজা হতে হবে।

বাসস্থানের গঠন : গরুর বাসস্থান তৈরির জন্য খোলামেলা উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি, একটি গরুর জন্য মাপ হতে হবে কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট। ভিটায় ১ ফুট মাটি উঁচু করে এর ওপর ১ ফুট বালু দিয়ে ইট বিছিয়ে মেঝে মসৃণ করার জন্য সিমেন্ট, বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে। গরুর সামনের দিকে চাড়ি এবং পেছনের দিকে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে ওপরে ধারি অথবা খড় ও পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে, ঘরের পাশে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি দাঁড়ানো গরুকে বাঁশ দিয়ে আলাদা করতে হবে যাতে একে অন্যকে গুঁতা মারতে না পারে। ঘরের চারপাশ চটের পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডার সময় ব্যবহার করা যায়।

খাদ্য : খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে খরচ কমানো সম্ভব। এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো-

শুকনা খড় : ২ বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনা খড় ২-৩ ইঞ্চি করে কেটে এক রাত লালীগুড়-চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানিঃচিটাগুড়=২০:১।

কাঁচা ঘাস : প্রতিদিন ৬-৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্য জাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কলাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।

দানাদার খাদ্য : প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যের তালিকা দেয়া হলো-
গম ভাঙা-গমের ভুসি ৪০ কেজি চালের কুঁড়া ২৩.৫ কেজি খেসারি বা যে কোনো ডালের ভুসি ১৫ কেজি তিলের খৈল-সরিষার খৈল ২০ কেজি লবণ ১.৫ কেজি।
উল্লিখিত তালিকা ছাড়াও বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন মিনারেল মিশ্রণ ১% হারে খাওয়াতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস বক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভুসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা : প্র্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে। গোশালা ও পার্শ¦বর্তী স্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। বাসস্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে। খাবার পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বাজারজাতকরণ : মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভালো মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজার মূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয় মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয় মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় গরুর মূল্য অত্যধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময়। স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সহজ এবং সুবিধাজনক উপায়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী পদ্ধতি।

কিন্তু প্রচলিত এবং অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের তুলনায় আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ অধিক লাভজনক। সুতরাং কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আমাদের দেশের কৃষকরা যদি ওই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করতে পারে তাহলে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় গরু আমদানি কমানো সম্ভব হবে এবং এর ফলে দেশ আর্থিকভাবে বিরাট সফলতা লাভ করতে সক্ষম হবে।


গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার ছাড়া গরু মোটাতাজাকরণঃ 
কোনোভাবেই ইনজেকশন বা কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছাড়াও স্বাভাবিক ও জৈব পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজাকরণ সম্ভব। এজন্য দরকার শুধু কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা।

কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার ছাড়াই যেভাবে গবাদিপশুর বেশি মাংস নিশ্চিত করা যায়, সে সম্পর্কে কিছু পদ্ধতি স্বল্প পরিসরে আলোকপাত করা হল: অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২ থেকে ৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে। এটির গুরুত্ব হচ্ছে- দারিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য হতে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

মোটাতাজাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পদ্ধতি: মোটাতাজাকরণের সঠিক সময়: বয়সের উপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৫ থেকে ৬ মাসও সময় লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচাঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার উপর ভিত্তি করে কোরবানী ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস পূর্ব থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।

স্থান নির্বাচন: গরু রাখার স্থান নির্বাচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে:
 ১. শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে
২. খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।
৩.খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে
৪. পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে;
৫. সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। গরু নির্বাচন: উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অলাভজনক। ২ থেকে ২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভাল। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সাথে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভেজা ভেজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাড়া সোজা হতে হবে। গরুর খাদ্যের ধরণ: খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দ্বারা খরচ কমানো সম্ভব।

এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হল: 

ক) শুকনো খড়: দুই বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনো খড় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে কেটে একরাত লালীগুড়/চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানি: চিটাগুড় = ২০ : ১।     
খ) কাঁচাঘাস: প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্যজাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কালাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
গ) দানাদার খাদ্য: প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যে তালিকা দেওয়া হল: ১. গম ভাঙা/গমের ভূসি-৪০ কেজি;
২. চালের কুঁড়া-২৩.৫ কেজি;
৩. খেসারি বা যেকোনো ডালের ভূসি-১৫ কেজি:
৪. তিলের খৈল/সরিষার খৈল-২০ কেজি; লবণ-১.৫ কেজি।
তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভূসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: ক. প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে;
খ. গো-শালা ও পার্শ্ববর্তী স্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে:
গ. নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে;
ঘ. বাসস্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।
ঙ. স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
চ. রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে।
ছ. খাবার পাত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।  
জ. খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।
ঝ. পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথাঃ গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার 

উপরের আলোতে খুব ভালোভাবে গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, পোষ্টটি পড়ে আপনার ভালো লাগবে। এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই, এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধের নাম, প্রয়োগের নিয়ম এবং গরুর ভিটামিন পাউডার এরকম আরো অনেক নতুন নতুন আর্টিকেল দেখতে চাইলে এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।       

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url