জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি আমাদের দেশের মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক। ইতিমধ্যে অনেকেই হয়তো গুগলে গিয়ে ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক’’ লিখে সার্চ করেছেন। কিন্তু আপনাদের মন মতোন হয়তো আপনারা পাননি । তাই আজকের এই পোষ্টের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক আপনাদের সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যে,আপনাদের নিশ্চয় েভালো লাগবে। তো চলনু আর দেরি না করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন কাহিনী বিস্তারিত এই পোষ্টের মাধ্যমে শুরু করি। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে এখান থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন আশা করি। So, let's start-
সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি তথা মানব-অভিজ্ঞতার কথা বা শব্দের বাঁধনে নির্মিত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি উচ্চতর গুণাবলি সমন্বিত বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মহত্তম শিল্পকর্ম। সাহিত্য-শিল্পীগণ যখন ‘অন্তর হতে বচন আহরণ’ করে আত্মপ্রকাশ কলায় ‘গীতরস ধারা’য় সিঞ্চন করে ‘আনন্দলোকে’ নিজের কথা- পরের কথা- বাইরের জগতের কথা আত্মগত উপলব্ধির রসে প্রকাশ করেন- তখনই তা হয়ে ওঠে সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় “বহিঃপ্রকৃতি এবং মানব-চরিত্র মানুষের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে-সঙ্গীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষা-রচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য।ৃসাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া – সেই উপায়ে তাহাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলাই হচ্ছে সাহিত্যের কাজ।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্য] সাহিত্য সত্য-সুন্দরের প্রকাশ হিসেবে প্রবহমাণ সময়ে যা ঘটে – সে-সবের মধ্য থেকে যা মহৎ, যা বস্তুসীমাকে ছাড়িয়ে বাস্তবাতীত প্রকাশ করে, যা জীবনের জন্য কল্যাণময় এবং মহৎ আদর্শের দ্যোতক তাকেই প্রকাশ করে। আসলে মহৎ সাহিত্য তাই- যা একাধারে সমসাময়িক-শাশ্বত-যুগধর্মী-যুগোপযোগী-যুগোত্তীর্ণ। সাহিত্য কেবল পাঠককে আনন্দ দেয় না- সমানভাবে প্রভাবিত করে পাঠক এবং সমাজকে।
আভিধানিকভাবে ‘সহিতের ভাব’ বা ‘মিলন’ অর্থে ‘সাহিত্য’ হলো কাব্য, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন; সাহিত্য¯্রষ্টা-সাহিত্যের সাথে পাঠকের এক সানুরাগ বিনিময়। কিন্তু আভিধানিক অর্থের নির্দিষ্ট সীমায় সাহিত্যের স্বরূপ-গতি-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির সম্যক ধারণা দেওয়া যেমন অসম্ভব, কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় তাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়াও তেমন দুঃসাধ্য। বাচ্যার্থ ও ব্যঞ্জনার্থর সীমাকে অতিক্রম করে নানা রূপে, রসে, প্রকরণ ও শৈলীতে সাহিত্যের নিরন্তর যাত্রা সীমা থেকে অসীমে। প্রত্যক্ষ সমাজপরিবেশ তথা সমকালীন বাস্তব পারিপার্শ্বিক, নিসর্গপ্রীতি ও মহাবিশ্বলোকের বৃহৎ-উদার পরিসরে ব্যক্তিচৈতন্য ও কল্পনার অন্বেষণ ও মুক্তি- আর এইভাবেই শ্রেণিবিভাজন, নামকরণ ও স্বরূপমীমাংসার প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে উঠে সাহিত্যের যাত্রা সীমাহীনতায়। প্রকৃত সাহিত্য তাই যেমন তার সমসময় যা যুগমুহূর্তের, তেমনই তা সর্বকালের সর্বজনের। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্বে বাস্তব সমাজজীবনকে ‘ভিত্তি’ আর শিল্প-সাহিত্যকে সমাজের উপরিকাঠামোর [ঝঁঢ়বৎংঃৎঁপঃঁৎব] অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের মৌল উপকরণসামগ্রী আহৃত হয় জীবনের ভা-ার থেকে- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বৈরিতার বিচিত্র-অনিঃশেষ ভা-ার থেকে। সাহিত্যসৃষ্টির মূলে সক্রিয় যে সৃজনী-ব্যক্তিত্ব তা নিছক বিমূর্ত কোনো সত্তা নয়; আত্মপ্রকাশ ও মানবিক সংযোগ ও বিনিময়ের বাসনায় অনুপ্রাণিত সে সত্তা তার ভাব-ভাবনা, বোধ ও বিশ্বাসকে এক আশ্চর্য কৌশলে প্রকাশ করে জনসমক্ষে কোনো একটি বিশেষ রূপ-রীতি-নীতির আশ্রয়ে। ব্যক্তিক অনুুভূতি-যাপিতজীবন-মিশ্রকল্পনার জগৎ থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের; যুগান্তরের আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহিত্য সত্যের পথে সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- সত্যকে সন্ধান করেছে। আসলে সাহিত্য এমনি এক দর্পণ- যাতে প্রতিবিম্বিত হয় মানবজীবন, জীবনের চলচ্ছবি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজজীবনে ঘটমান ইতিহাস- ইতিহাসের চোরাস্রােত নানাবিধ কৌণিক সূক্ষ্মতায়।
>>আরো পড়ুনঃ ইন্টারনেটের ইতিহাস
সাধারণত আত্মপ্রকাশের বাসনা, সমাজ-সত্তার সঙ্গে সংযোগ কামনা, অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ এবং রূপপ্রিয়তা- এই চতুর্মাত্রিক প্রবণতাই মানুষের সাহিত্য-সাধনার মৌল-উৎস। চতুর্মাত্রিক প্রবণতার [আত্মপ্রকাশের কামনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে যোগাযোগ বা মিলনের কামনা, কল্প-জগতের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্য-সৃষ্টির আকাক্সক্ষা বা রূপমুগ্ধতা] মধ্যে সমাজসত্তার সঙ্গে সংযোগ-কামনা এবং অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ- এই উৎসদ্বয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে আন্তর-সম্পর্কের প্রাণ-বীজ। সমাজ শিল্পীকে সাহিত্য-সাধনায় প্রণোদিত করে। ‘সহৃদয়-হৃদয় সংবাদ’এর মাধ্যমে সাহিত্যিকগণ লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেন- উভয়ের হৃদয়বীণার তারগুলোকে একই সুতায় গেঁথে দেন। এর কারণে সাহিত্য দেশ-কাল-সমাজের সীমা অতিক্রম করে সর্বসাধারণের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এর ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন-সর্বকালের মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী এবং সাহিত্য হয়ে ওঠেন অনেক বড়। কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যচর্চার গতি-প্রকৃতি, সমস্যা-সংকট-সমাধান কোন দিকে? এসব বিষয়ের সন্ধান- এ প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রচনার সংকেত (Hints)-
- ভূমিকা
- জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
- শৈশবজীবন
- শিক্ষাজীবন/ছাত্রজীবন
- বৈবাহিক জীবন
- মুসলিম সেবা সমিতি
- প্রাক রাজনৈতিক জীবন
- বৈপ্লবিক রাজনৈতিক জীবন
- গ্রেফতার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
- রাজনীতিতে অংশগ্রহণ
- ছাত্রলীগ গঠন
- বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ
- আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন
- ভাষা আন্দোলন
- যুক্তফ্রন্ট
- কারাগার থেকে কারাগারে
- ঐতিহাসিক ছয় দফা
- আগরতলা মামলা
- গণঅভ্যুত্থান
- বাংলাদেশ নামকরণ
- ১৯৭০ এর নির্বাচন
- অসহযোগ আন্দোলন
- ৭ই মার্চের ভাষণ
- স্বাধীনতার ঘোষণা
- স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি
- স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সংবিধান রচনা
- সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
- অসমাপ্ত আত্মজীবনী
- কারাগারের রোজনামচা
- বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধু
- ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড
- বঙ্গবন্ধুর শাসনামল
- মৃত্যু
- উপসংহার
ভূমিকাঃ পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আজ অবধি যুগে যুগে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটেছে, যাদের হাত ধরে মানবতার মুক্তির সনদ রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্মের সাথে যার নাম অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বসম্মোহনীদের নামের তালিকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাগ্রে। আর এমন ব্যক্তিত্বের আঙুলের ইশারায় পৃথিবীর বুকে মহাবিপ্লব সংঘটিত হয়। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের পুরােধা ব্যক্তিত্ব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের জাতির পিতা। সংগ্রাম ও অবদানে নিজ নিজ জাতির মুক্তিদাতা হিসেবে মানুষের মাঝে অমর হয়ে আছেন আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো প্রমুখ নেতা। আর বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ সংগ্রাম ও সাধনার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের বরপুত্র হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন। তাঁর জীবনাদর্শে আমরা সংগ্রামী চেতনা ও কর্মনিষ্ঠার পরিচয় পাই ।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়ঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ (সাবেক ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান । টুঙ্গিপাড়া গ্রামে প্রকৃতির নিবিড় আশ্রয়ে জল-মাটি-কাদায় হেসে-খেলে শৈশব কাটে শেখ মুজিবুর রহমানের।
শৈশবজীবনঃ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম'। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন তাঁর ‘শেখ মুজিব আমার পিতা' গ্রন্থে বলেন, “আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে। বর্ষার কাদাপানিতে ভিজে । ছােটোবেলা থেকে শেখ মুজিব ছিলেন খুব চটপটে স্বভাবের। বাড়ির সবাই তাকে খােকা নামে ডাকত। তার ছিল অদম্য প্রাণশক্তি। নদীতে-খালে-বিলে ঝাঁপ দিয়ে, সঁতরিয়ে সবাইকে মাতিয়ে তুলতেন। খেলাধুলায়ও বেশ ভালাে ছিলেন তিনি। স্কুলের ফুটবল দলেও তাঁর পাকা স্থান ছিল। ছােটোবেলা থেকে শেখ মুজিবের মধ্যে দরিদ্র-বতিদের জন্য ভালােবাসার প্রকাশ দেখা যায়। উঁচু ক্লাসে এসে তার প্রতিবাদী চেতনার পরিচয়ও মেলে। একবার অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও মন্ত্রী হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী গােপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে আসেন। সবার হয়ে স্কুলের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। তার জোরালাে বক্তব্য স্কুলটির সমস্যা নিরসনে সাহায্য করে। ছােটোবেলা থেকে তাঁর মধ্যে সুস্পষ্ট প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
শিক্ষাজীবন/ছাত্রজীবনঃ ১৯২৭ সালে বঙ্গবন্ধুর বয়স যখন মাত্র ৭ বছর তখন তাঁকে স্থানীয় গিমাডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৯২৯ সালে অর্থাৎ ৯ বছর বয়সে তাঁকে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মিশনারি স্কুলে পড়ালেখা করেন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় ৪ বছরকাল তাঁর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। অতঃপর ১৯৩৭ সালে আবারও তিনি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকেই তিনি ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে বসবাস শুরু করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা - বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন ও নেতৃত্বদানকে কেন্দ্র করে বৈরী অবস্থার সৃষ্টি হলে আইন বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তাঁর ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটে। এটারই প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় । শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তিনি থাকতেন সামনের কাতারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করার জন্য তাঁকে জরিমানা করা হয়। তরুণ মুজিব অন্যায়ভাবে ধার্য করা জরিমানা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। আইন বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় তাঁর ছাত্রজীবনের অবসান হয়।
বৈবাহিক জীবনঃ ১৯৩৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান শেখ ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। তাদের ঘর আলোকিত করেছে তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এবং দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বিবাহ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন, “আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তেরো বছর হতে পারে। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে,তখন কিছুই বুঝতাম না। রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে” ।
মুসলিম সেবা সমিতিঃ বঙ্গবন্ধুর একজন স্কুল মাস্টার একটা সংগঠন গড়ে তোলেন যার সদস্যরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ধান, চাল, টাকা, জোগাড় করে গরিব মেধাবী ছেলেদের সাহায্য করতেন। বঙ্গবন্ধু সেই দলের অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা 'মুসলিম সেবা সমিতি' গঠন করেন, যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন। মুষ্টির চাল উঠাভেন প্রত্যেক মুসলমানের বাড়ি থেকে। প্রত্যেক রবিবার আমরা থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাউল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাউল বিক্রি করে তিনি গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার অন্যান্য খরচ দিতেন”। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী) এছাড়া তার দানশীলতা সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, 'দাদির কাছে শুনেছি আব্বার জন্য মাসে কয়েকটা ছাতা কিনতে হতো কারণ আর কিছুই নয়। কোন ছেলে গরিব, ছাতা কিনতে পারে না, দূরের পথ রোদ বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে, তাদের ছাতা দিয়ে দিতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন।' (শেখ মুজিব আমার পিতা)
প্রাক রাজনৈতিক জীবনঃ শৈশব থেকেই তিনি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতেন। অন্যায় কিংবা অন্যায়কারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিদান করতে বিন্দুপরিমাণ বিচলিত হতেন না। তিনি রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করেই দেশ ও জাতির অঘোষিত বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাঁর চোখে-মুখে একটিই স্বপ্ন- বাঙালি জাতির অধিকার পুনরুদ্ধার করা যা ১৭৫৭ সালে পলাশি প্রান্তরে হারিয়ে যায়।
বৈপ্লবিক রাজনৈতিক জীবনঃ ছাত্রজীবন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ। রাজনীতি যেন তাঁর রক্তে মিশে আছে। তিনি উপলব্ধি করতেন যে, রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমেই বৃহৎ কল্যাণ সম্ভব। তাইতো এ দেশের সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে তিনি সবসময় অগ্রভাগে ছিলেন। গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য সাত দিন কারাভোগ করেন। নেতৃত্বগুণের কারণে ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলী (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পিকেটিং এর সময় গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালে মাওলানা ভাসানীর সাথে ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দান কালে গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন আওয়াম মুসলিম লীগ এর জন্ম হলে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি যুগা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফা উত্থাপন করেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি বৃহৎ অংশ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে কাটান। ১৯৬৮ সালে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাভোগ করেন এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেফতার হন।
গ্রেফতার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনঃ ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। তার স্বাক্ষরিত ঘােষণা বার্তাটি তৎকালীন ইপিআর- এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭-এ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘােষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। প্রায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছে ফিরে আসেন। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় দেশ গড়ার নতুন সংগ্রাম ।
রাজনীতিতে অংশগ্রহণঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর “শেখ মুজিব আমার পিতা” গ্রন্থে উল্লেখ করেন, 'গোপালগঞ্জ স্কুল খেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে যান। তখন বেকার হোস্টেলে থাকতেন। এই সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদীর সংস্পর্শে আসেন। হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন সক্রিয়ভাবে। এই সময় থেকে তাঁর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়।
ছাত্রলীগ গঠনঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” গ্রন্থে বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তারিখে ফজলুল হক মুসলিম হলের এ্যাসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হলো, সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে। যার নাম হবে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ' ।
বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভঃ নির্যাতন-নিষ্পেষণ যত বৃদ্ধি পেতে থাকে, ৬ দফা কর্মসূচি দিন দিন ততই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৬৯ সালে প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খানের সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আয়ােজিত গণসংবর্ধনা সমাবেশে তাঁকে বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয় ।
আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনঃ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন, “শেষপর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু কর্মীরা না, অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো, 'পূর্ব পাকিস্তান
আওয়ামী মুসলিম লীগ' । মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামছুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি”।
ভাষা আন্দোলনঃ ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন আইন পরিষদে 'পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে' বলে ঘোষণা দিলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে ওই ঘোষণার প্রতিবাদ জানান। ২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে ভাষার প্রশ্নে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবক্রমে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গড়ে ওঠে। ১১ মার্চ হরতাল চলাকালে সচিবালয়ের সামনে থেকে তিনি গ্রেফতার হন। তারপর ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন আবারও ঘোষণা করে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু' । এ ঘোষণার প্রতিবাদে বন্দি থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাজবন্দী মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসেবে পালন করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের করলে ওই মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। ফলে সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত ও সফিউরসহ অনেকেই শহিদ হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেলে বসে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং ১৩ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন। তারপর ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলখানা থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
যুক্তফ্রন্টঃ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরেবাংলা, ভাষানী ও হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ারদীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর শেরেবাংলা একে ফজলুল হক সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে সমবায় ও কৃষিঋণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
কারাগার থেকে কারাগারেঃ ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির চারদিন পর বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়। প্রায় ১৪ মাস আটক রাখার পর মুক্তি পান তিনি। তবে আবার জেলগেট থেকে তাঁকে আটক করা হয়। প্রায় দুই বছর কারাগারে থাকেন এসময়। ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি মুক্তি পান। ১৯৬২ সালে জননিরাপত্তা আইনে আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । পরবর্তীতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধু এর সমালোচনা করেন এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। ৭ মার্চ ২০১৭ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে মোট ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমলে ৭ দিন এবং পাকিস্তান আমলে ৪৬৭৫ দিন। বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থায় ১৯৩৮ সালে প্রথম কারাগারে যান।
ঐতিহাসিক ছয় দফাঃ ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আইয়ুব বিরোধী রাজনৈতিক দল সমূহের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা দাবির প্রথম দফা ছিল 'লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে'।
আগরতলা মামলাঃ পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মরত ও প্রাক্তন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা ভারত সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্ত ানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা শহরে ভারতীয় পক্ষ ও আসামি পক্ষদের মধ্যে এ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ থাকায় একে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ মামলা এবং এর প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ৩৫ জনকে আসামি করে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২১-ক ধারা এবং ১৩১ ধারায় মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলায় শেখ মুজিবকে ১ নম আসামি করা হয় এবং 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং' নামে মামলাটি পরিচালিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার অচিরেই মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
গণঅভ্যুত্থানঃ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ, বাঙালির ম্যাগনাকার্টা। ১৯৬৭ সালের ১৬ জুন নির্ভীক সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেনের ইত্তেফাক পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২৩ জুন রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু কে প্রধান আসামী করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা করে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়। ফলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র সমাজ ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে। ৮ জানুয়ারি ৮টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়। ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। আন্দোলন তীব্র হয় । ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে কারাগারের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুজ্জোহা কে হত্যার ফলে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ জানুয়ারি সারা দেশে গণ আন্দোলন হয় ।
বাংলাদেশ নামকরণঃ ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ারদীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামীলীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, “জনগণের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি, আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্বপাকিস্তানের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ” হবে” ।
১৯৭০ এর নির্বাচনঃ ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রতীক ছিল নৌকা, স্লোগান ছিল 'জয় বাংলা' আর ঘোষণাপত্র ছিল ছয় দফা। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি লাভ করলেও আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় না। এ জন্যই ১৯৭০ সালের নির্বাচনকে পাকিস্তানের মৃত্যুর বার্তাবাহক বলা হয় ।
অসহযোগ আন্দোলনঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল এক ব্যক্তি এক ভোট নীতির প্রথম নির্বাচন। ৩ মার্চ ১৯৭০ সালে আ. স. ম. আবদুর রব বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা' উপাধি প্রদান করেন। এই সমাবেশে বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
৭ই মার্চের ভাষণঃ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে রোজ শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। সময় বিকাল ৩টা ২০ মিনিট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা বলেন, এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ২৩ মিনিট তবে ১৮-১৯ মিনিট রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করেন এ এইচ খন্দকার এবং চিত্র ধারণ করেন আবুল খায়ের এমএনএ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫ম তফসিলে জাতির পিতার এ ভাষণ সন্নিবেশিত হয়। এ ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বলেন “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই”। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। যথাঃ
১. প্রথমে মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে।
২. সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে হবে ।
৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে।
৪. জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
১৩ নভেম্বর ২০১৭ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ২৬টি বাক্যের বিশ্লেষণ করে “বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: রাজনীতির মহাকাব্য” শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রন্থটি প্রকাশ করে-তথ্য ও যোগাযোগ । প্রযুক্তি বিভাগ। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে “ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ” বা “বিশ্ব প্রামাণ্যের ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৪২৭ টি নথি এতে যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ইউনেস্কো ঘোষিত ৭৮টি ঐতিহাসিক দলিলের মধ্যে ৭ই মার্চের ভাষণ ৪৮ তম। ইউনেস্কোর এযাবৎ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৪২৭টি প্রামাণ্য ঐতিহ্যের মধ্যে প্রথম অলিখিত ভাষণ এটি। স্বীকৃতির সময় ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ছিলেন ইরিনা বোকোভা। ৭ মার্চের ভাষণকে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে যুদ্ধকালে দেয়া বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তৃতা বলা হয় ।
স্বাধীনতার ঘোষণাঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীরা নিরীহ মানুষদের উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে। শুধু ঢাকাতেই ৫০ হাজারের বেশী মানুষ হত্যা করে তারা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম এম এ হান্নান নিজের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ভূমিকাতে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার পরপরই আমাদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হানা দেয় এবং আমার পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিঃ দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমারা স্বাধীনতা লাভ করি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রেসকোর্সের ময়দানে আত্মসমর্পন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ। আর এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সংবিধান রচনাঃ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার ঢাকায় এসে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ঙ. রহমান সংবিধান রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জব 'অস্থায়ী সংবিধান' আদেশ জারি করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ১০ এপ্রিল ১৯৭২ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট সংবিধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং একমাত্র মহিলা সদস্য ছিল রাজিয়া বানু। খসড়া কমিটি ৪৭টি বৈঠকের মাধ্যমে খসড়া চূড়ান্ত করে। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধান গণ পরিষদে উত্থাপন করা হয় এবং ৪ নভেম্বর ১৯৭২ (১৮ কার্তিক ১৩৭৯) তা গৃহীত হয়। প্রতি বছর ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয় । ১৫ ডিসেম্বর সংবিধানে স্বাক্ষর করা হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে তা কার্যকর হয়।
সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারঃ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্স ময়দানে এক ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষনা দেন। পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আমলে সংবিধান মোটঃ বার সংশোধন করা হয়। যুদ্ধবন্দীদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রথম সংশোধনী আনা হয়। রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি, মেয়াদ ও জরুরী অবস্থার বিধান রেখে ২য় সংশোধনী আনা হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির আলোকে ৩য় সংশোধনী আনা হয় । এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত ঝড়ষ সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।
অসমাপ্ত আত্মজীবনীঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত আত্মজীবনী মূলক প্রথম গ্রন্থ 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'। ২০১২ সালের জুন মাসে বইটি দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড' থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রচ্ছদ সমর মজুমদার এবং গ্রন্থস্বত্ব ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট' ।
১৯৬৭-১৯৬৯ সালে কারাগারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু বইটি লেখেন। বইটি লিখতে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দেন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে ফজলুল হক মনির ড্রয়ার থেকে এর মূল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট সাব জেলে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বইটির ভূমিকা লেখেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস সহ বাল্যকাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন।
কারাগারের রোজনামচাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত আত্মজীবনী মূলক দ্বিতীয় গ্রন্থ 'কারাগারের রোজনামচা'। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান। বইটি ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৯৮ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে ঐতিহাসিক বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়। পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন “থালাবাটি কম্বল/জেলখানার সম্বল"। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বইটির নামকরণ করেন ‘কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থটিতে ১৯৬৬-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের চিত্র তুলে ধরেছেন। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ শিল্পী তারিক সুজাত। বঙ্গবন্ধু এই গ্রন্থটিতে তাঁর জেল জীবনের পাশাপাশি জেল যন্ত্রণা, কয়েদীদের অজানা কথা, অপরাধীদের কথা, কেন তারা এই অপরাধে লিপ্ত হলো তার কথা, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আওয়ামীলীগ নেতাদের দুঃখ দুর্দশা, সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা, শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন প্রভৃতি তুলে ধরেছেন। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইটির গ্রন্থস্বত্ব হচ্ছে 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট'।
বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টভাষী ও রসিক মানুষ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সভায়ও সমানভাবে সমাদৃত ছিলেন। তিনিই প্রথম ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। তিনি ১৯৭২ সালে বিশ্বশান্তি পরিষদের দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা 'জুলিও কুরী' পুরস্কার লাভকরেন।
ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডঃ ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল কালরাত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী একটি অংশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের ঐতিহাসিক বাড়িতে এক কুখ্যাত হামলা চালিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্যতীত নিকটাত্মীয়স্বজনসহ সপরিবারে শহিদ হন তিনি ।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলঃ বাংলার মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সুরণীয় অধ্যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাকালীন ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে কুষ্টিয়ার মেহেরপুর (মুজিবনগরে) স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি-১৯৭২ দেশে ফিরে আসেন এবং ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করে বাংলাদেশের সাংবিধানিক যাত্রার শুভ সূচনা করেন। এ সময় দেশে সংসদীয় সরকারপদ্ধতি চালু করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। সময়ের দিক থেকে তার শাসনামল অতি স্বল্পকালীন হলেও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এবং বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে তার অবদান ছিল অসামান্য।
মৃত্যুঃ মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তােলার প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু কে জানত স্বাধীনতাবিরােধী ঘাতকেরা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র শানিয়ে তুলছে তার বিরুদ্ধে! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।
উপসংহারঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহানুভবতা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন “আমি হিমালয় দেখিনি, আমি দেখেছি শেখ মুজিবকে”। তাই বলতে হয় “যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরি, যমুনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান” । বাঙালি জাতির জীবনে যে অল্প কয়েকজন মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছেন তাদের মধ্যে প্রধানতম পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির হৃদয়ে মধ্যমণি হয়ে থাকবেন চিরদিন।
===প্রবন্ধ রচনা সমাপ্তি===
বঙ্গবন্ধুদর জীবন নিয়ে নাটক ‘আমার সাধ না মিটিলো’ মঞ্চস্থ
বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে শামীম সাগরের রচনা ও নির্দেশনায় ‘আমার সাধ না মিটিলো’ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে কুষ্টিয়া ছেউড়িয়া লালন একাডেমির অডিটোরিয়েমে এ নাটক মঞ্চস্থ হয়। কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি এ নাটকের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংষদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নাটকের উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের সাংস্কৃতির অন্যতম একটি মাধ্যম হলো নাটক। সামরিক সরকার বিরোধী আন্দোলনেই এই নাট্যকর্মীরা মঞ্চে ও রাজপথে তাদের উপস্থিতি রেখে সবসময় দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে আমাদের গণতন্ত্র সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সংস্কৃতি কর্মীদের এই প্রয়াস আগামী দিনে আমাদের গণতন্ত্রকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু মানেই দর্শন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজ আমরা এগিয়ে চলেছি মুক্তির পানে ও ক্রমাগত উন্নতির পথে। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই একটি দর্শন, একটি চেতনা। তার দেখানো পথ ধরে, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার নেতৃত্ব দিয়ে আধুনিক দেশ গড়ার দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো: আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারকালী) আসনের সংসদ সদস্য সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, মাহবুব উল আলম হানিফের সহধর্মিনী ফৌজিয়া আলম, কুষ্টিয়ার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মৃণাল কান্তি দে, সসদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোবায়ের হোসেন চৌধুরী, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম খানসহ জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা শিল্পী ও কলাকুশলী উপস্থিত ছিলেন।
নাটকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চরিত্রে মো. আমিরুল ইসলাম, মান্নাফের চরিত্রে শহিদুর রহমান রবি, মেজর, মহিদতুলের চরিত্রে শাহীন সরকার, মানুষ চরিত্রে আসলাম আলী, মৌলভী ও এসপি সালামের চরিত্রে আনোয়ার বাবু, ক্যাপ্টেনের চরিত্রে শাহেদ সহরোয়ার্দী, মোহিতুলের চরিত্রে বিশ্বজিৎ মজুমদার, হাবিলদারের চরিত্রে ফাহিম হাসান, ওসি/সিরাজের চরিত্রে সাইমুর রহমান অনিক, রজবের চরিত্রে সৌরভ, এবং গ্রামবাসী ফারুকের চরিত্রে ইউসুফ অভিনয় করেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বাঙালি জাতির কলঙ্কিত অধ্যায়ের প্রেক্ষাপটে রচিত নাটকটি। বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় ১৫ আগস্টের পরদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ দাফনের ঘটনাকে উপজীব্য করেই এগোতে থাকে নাটকের গল্প।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর ছবি/পিকচার
আমরা গুগলে গিয়ে অনেক সময় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর ছবি/পিকচার’ খুজে থাকি। কিন্তু ভালো কোনো শেখ মুজিবর রহমান এর ছবি/পিকচার পাওয়া যায় না। নিম্নে বাছাই করা কয়েকটি সুন্দর সুন্দর ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর ছবি/পিকচার’ দেওয়া হইলো-চাইলে এখান থেকে ডাউনলোড করেও নিতে পারেন।
নাটক গান চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু
গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যতটা উজ্জ্বল ও স্বমহিমায় প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে, বিগত ৪৭ বছরে কোনো সময়ই এভাবে প্রতিফলিত হয়নি। যদিও জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের আগেই 'বঙ্গ-বন্ধু' নামের সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন অভিনেতা রাজ। সেই খবর ওই সময়ের পত্রিকায় প্রকাশ হয়, শিরোনাম 'নতুন ছবি বঙ্গ-বন্ধু'। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত সেটাই ছিল প্রথম উদ্যোগ, এরপর গঙ্গার জল পদ্মায় অনেক গড়িয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো সিনেমা হয়নি। সংস্কৃতিবান্ধব বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই তার পটপরিবর্তন হয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বাধীনতার আগে এবং পরে এমনকি তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত লেখা হয়েছে অজস্র কবিতা, গান ও নাটক। পৃথিবীর অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে এত বিপুলসংখ্যক শিল্প সৃজনের ইতিহাস নেই। বিশেষ করে, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এই চিত্রটি সবচেয়ে বেশি ভাস্বর হয়ে আছে। তবে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, অ্যানিমিশন চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি, পেইন্টিং, স্কেচ, নাটকে ও গানে এটার প্রকাশ যতটা মজবুত হয়, অন্য কোনো মাধ্যমে ততোটা নয়।
সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নিজেরও চলচ্চিত্র শিল্পসহ, শিল্পের সব শাখার প্রতিই উৎসাহ ছিল। রাজনীতি নিয়ে সর্বদা ব্যস্ততার মধ্যেও পারিবারিকভাবে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন- এমন নজীরও আছে। পুরান ঢাকার 'মায়া' নামে একটি প্রেক্ষাগৃহে উত্তম-সূচিত্রা অভিনীত 'শাপমোচন' সিনেমা দেখেছেন। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'সংগ্রাম' সিনেমায় নিজের ভূমিকায় ক্যামিও করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক সবাইকেই সমভাবে কদর করতেন। আর্থিক অনটনে গুরুত্বপূর্ণ চাকরির ব্যবস্থাও করে দিতেন। শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক-সংস্কৃতির এসব শাখার প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগেই আজকে এফডিসিও প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই মন্ত্রিসভার শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। সে সময় ঢাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম স্টুডিও স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন এ দেশের প্রথম চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ' এর নির্মাতা আবদুল জব্বার খান, পূর্ববাংলার পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক ডক্টর আবদুস সাদেক, নুরুজ্জামানসহ অনেকে। তিনি তাদের ফিল্ম স্টুডিও স্থাপনের ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেশ করতে বলেন।
সেই সূত্রে আবদুল জব্বার খান ও তদানীন্তন প্রাদেশিক সরকারের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দীন যৌথভাবে সরকারের কাছে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। পরে সেই প্রস্তাবেরই বাস্তবরূপ আজকের এফডিসি। সে জন্য বর্তমান সরকারও বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জোর দেয় পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রতিই বেশি। এ লক্ষ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের অংকও অনেক বাড়ানো হয়েছে। এর সুফল এখন হাতেনাতেই ভোগ করছে সরকারি অনুদানের পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো। এর মধ্যে মুক্তি পাওয়া, মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এবং নির্মাণাধীন ও প্রস্তাবনায় থাকা সিনেমা মিলিয়ে প্রায় শ' পঞ্চাশেক হয়ে গেছে। যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন নতুন সিনেমা হচ্ছে, এতে করে এটা ভবিষ্যতে কোনো একক নেতাকে নিয়ে সিনেমা করার ক্ষেত্রে গিনেস রেকর্ড বুকেও উঠতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে 'টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই' চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে বলেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যেকোনো একটি দিন নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব।' প্রিমিয়ার শো'তে দীপু মনি আরও বলেন, 'এই চলচ্চিত্রটি বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর কাল নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র এই প্রথম মুক্তি পেল। আশা করি, তাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের যাত্রা অব্যাহত থাকবে।' ইতোমধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সেলিম খানের 'টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই', নজরুল ইসলামের 'চিরঞ্জীব মুজিব', অ্যানিমিশন চলচ্চিত্র ডক্টর হানিফ সিদ্দিকীর 'খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা', মোহাম্মদ সোহেল রানার 'মুজিব আমার পিতা', তৌকির আহমেদের 'স্ফূলিঙ্গ' দর্শকের ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে বহুল আলোচিত শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক 'বঙ্গবন্ধু', আশরাফ শিশিরের '৫৭০'।। নির্মাণাধীন আছে কাজী হায়াত পরিচালিত 'জয়বাংলা', মুশফিকুর রহমান গুলজারের 'টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা', এফএম শাহীন ও হাসান জাফরুল (বিপুল) পরিচালিত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক'। আছে পরিকল্পনায় থাকা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও সিনেমা।
উত্তম আকাশের 'বাবা তুমি কেমন আছো' ছাড়াও আছে আরও ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা। শুধু চলচ্চিত্রই নয়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মঞ্চনাটক, টিভি নাটকও হচ্ছে এখন অবারিতভাবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে টিভি নাটকের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- মান্নান হীরার 'মহামানবের দেশে', আরটিভির 'মহানায়ক', সহিদ রহমান রচিত আবুল হায়াত পরিচালিত 'তখন পঁচাত্তর', একাত্তর টিভি'র '৩২ এর ক্রন্দন' অন্যতম। তবে তুলনামূলকভাবে টিভিতেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কম নাটক হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিতে হতে দেখা গেছে মঞ্চ ও যাত্রাপালাতেই বেশি। ২০২১ সালে 'নবনাট্যে নব নন্দনে বঙ্গবন্ধু' শিরোনামে ৬৪টি জেলায় হয়েছে মঞ্চনাটক। এ ছাড়া এর আগে আবদুল গাফ্ফার খান চৌধুরীর 'পলাশী থেকে ধানমন্ডি' লন্ডন, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটকও পড়ানো হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেমন, কেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আনিসুর রহমানের 'আমি শেখ মুজিব', 'দাবিত ইসাক', 'মন্ত্রী ও হায়েনা' নাটক পড়ানো হচ্ছে। 'আমি শেখ মুজিব' নাটকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন নাট্যমঞ্চে মঞ্চস্থ হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক শামীম সাগরের 'আমার সাধ না মিটিল' এবং লোক নাট্যদলের লিয়াকত আলী লাকী নির্দেশিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও সমাপ্ত স্বাধীনতা'। এ ছাড়া লিয়াকত আলী লাকীর 'মুজিব মানেই মুক্তি', মামুনুর রশীদের 'টার্গেট পস্নাটুন' ও 'সোয়াত', মাসুম রেজার 'জনকের অনন্তযাত্রা', মান্নান হীরার 'আগুনের ছায়া', দেবাশীষ ঘোষের 'প্রহরী', রুমা মোদকের 'যুদ্ধ ও জয়িতারা', মুন্সি মোহাম্মদ আলি রুমির 'বিজয়ের প্রান্তে', 'আকবর রেজার 'মেঘের স্বীকৃতি', মাহমুদুল ইসলাম সেলিমের 'মুখোমুখি', ডক্টর পরিমল সরকারের 'বন্ধু নঈমকে খোলা চিঠি', আনন জামানের 'বালিকা ও একটি স্বর্ণপশম ভেড়ার নাট্য', শামীম সাগরের 'সিংহজানির দুঃখগাথা কিংবা পুনর্জাগরণ পালা', 'হাসান তারেকের 'শিরোমণির ট্যাংকযুদ্ধ, অতঃপর', মাহবুব লীলেনের 'মুক্তিকথন', টিটো রেদওয়ানের 'আঁ লে হঁ দিশম লে স্বাধীনাকাদা', কামাল উদ্দিনের 'শনি', আল জাবিরের 'মুক্তির প্রতিভাস', শামসুল হাদীর 'সবুজ রক্ত ও এন্টিভাইরাস'। অন্যতম।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হয়েছে বহু যাত্রাপালা। এর মধ্যে রয়েছে- মন্মথ রায়ের 'আমি মুজিব নই', দিগিন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'দুরন্ত পদ্মা', উৎপল দত্তের 'জয়বাংলা', নরেশ চক্রবর্তীর 'সংগ্রামী মুজিব', নিরাপদ মন্ডলের 'মুক্তিফৌজ', সত্যপ্রকাশ দত্তের 'বঙ্গবন্ধু মুজিবুর', ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বঙ্গবন্ধুর ডাক', অরুণ রায়ের 'আমি মুজিব বলছি', ব্রজেন্দ্রকুমার দে-র 'মুজিবের ডাক', সাধন চক্রবর্তীর 'শেখ মুজিব', মৃণাল করের 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব', পরিতোষ ব্রহ্মচারীর 'নদীর নাম মধুমতি' এবং কবিয়াল বিপিন সরকারের 'মুক্তিসেনা' প্রভৃতি। তবে এই যাত্রাপালাগুলোর সবই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পূর্বে অভিনীত হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই এ দেশের যাত্রাপালায় দুর্দিন চলে আসে। ২০ বছর আর নতুন পালা হয়নি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ বছর পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটপরিবর্তন হলে দিলীপ সরকার রচনা করেন 'বাংলার বিজয়' নামের যাত্রাপালা। যাত্রাসম্রাজ্ঞী জ্যোৎস্না বিশ্বাস ১৯৯৬ রচনা করেন 'রক্তস্নাত একাত্তর' নামের যাত্রাপালা। পালাটি ঢাকার মঞ্চে ১৭ বার অভিনীত হয়। একই বছর আব্দুস সামাদ নামের এক পালাকার 'একাত্তরের জলস্নাদ' নামের পালা রচনা করেন। ১৯৯৫ সালে এমএ মজিদ রচিত 'সোনার বাংলা' এবং ১৯৯৭ সালে নজরুল ইসলাম সাজু রচিত 'বাংলার মুক্তি' পালা দুটিও বিষয়ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। এ ছাড়া 'সোনার বাংলা', 'বাংলার বিজয়', 'বাংলার মুক্তি' যাত্রামঞ্চে অভিনীত হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিশেষ নাটক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন আজ। দিনটিকে কেন্দ্র করে আরটিভির জন্য নির্মিত হয়েছে একটি বিশেষ নাটক। নাম ‘মহানায়ক’। এটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন সুমন আনোয়ার। নাটকের গল্পে দেখা যাবে, মফস্বলের একজন প্রবীণ হোমিও ডাক্তার মতিন। তিনি চিরকুমার। সংসার করেননি দেশ গড়বেন বলে। তাকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দেয়নি কেউ। নিজেই নিয়েছেন এ দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ তিনি করে যেতে চান। তার কাজ শুরু হয় বাড়ি থেকে, তার গ্রামকে ঘিরে। যে সোনার বাংলার স্বপ্নে একজন মহানায়ক ৭ মার্চ ডাক দিয়েছিলেন, যে বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি সংস্কৃতির সঙ্গে ঐতিহ্যের মতো লালন হবে, যে বাংলায় কৃষক হবে সম্মানীত, চাকরিজীবীরা দেশের সেবায় ব্যস্ত থাকবেন, সেই বাংলা গড়তে ডাক্তার মতিন আজও যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন মহানায়ক মুজিবের আবার জন্ম হবে। আবার সে ফিরে আসবে এ বাংলার জীবনানন্দের কবিতায়। এতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দারুণ গল্পের একটি নাটক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এটা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষাও বলা যায়। আশা করি নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে।’ নাটটিতে আরও অভিনয় করেছেন সজল, সালহা খানম সাদিয়া প্রমুখ। এটি আজ রাত ৮টায় আরটিভিতে প্রচার হবে।
শেষ কথাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও নাটক উপরের আলোতে খুব ভালো ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ওখান থেকে আপনার কাঙ্খিত রচনার বাছাইকৃত পয়েন্ট গুলো পড়ে নিতে পারেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের। কেবল তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড, তৈরি করে রাজনৈতিক শূণ্যতা, ব্যাহত হয় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তােলার প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু কে জানত স্বাধীনতাবিরােধী ঘাতকেরা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র শানিয়ে তুলছে তার বিরুদ্ধে! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । আজকের পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে পারেন ও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের টিম আপনার কমেন্টের উত্তর খুব তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবে। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url