শেখ রাসেল রচনা - দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি- ‘শেখ রাসেল রচনা-দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী’ সম্পর্কে। সেই ছোট্ট শেখ রাসেল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতে ছোট্ট বেলায় মৃত্যুবরণ করে। তখন তার বয়স মাত্র ০৮ (আট) বৎসর। সে যদি আজ বেঁচে থাকতো তাহলে আমাদের বাঙ্গালি জাতির কতই না উপকার করতো। আসলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছেলে তো তাঁর মতোনই হবে। ‘শেখ রাসে’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শ সন্তান ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীরা তা এক রাতেই সব শেষ করে দিয়ে চলে গেলো। আল্লাহ্/ঈশ্বর অবশ্যই তাদের একদিন বিচার করবে। অনেক কথায় বলা হলো- তো চলুন জেনে নেওয়া যাক- শেখ রাসেল রচনা - দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’। এই নামকরণে মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। কিন্তু মাত্র দেড় বছর বয়স থেকেই প্রিয় পিতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের একমাত্র স্থান হয়ে ওঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তবে সাত বছর বয়সে ১৯৭১ সালে তিনি নিজেই বন্দি হয়ে যান।
শেখ রাসেল রচনা
শেখ রাসেল ছিল অতন্ত্যই শান্ত প্রকৃতির, কিন্তু খুব বুদ্ধিমান। আমাদের দেশে বাঙালি জাতির প্রধান নেতা বললেই যে মানুষটির নাম সর্বপ্রথম মাথায় আসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ১৯৭৫ সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম ও করুণ পরিণতির কথা আমরা সকলেই জানি । স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করি তার বীর পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামালকে । তবে প্রায়শই যাকে আমরা ভুলে যাই তিনি হলেন ওই একই পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য , বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল । মাত্র ১১ বছর বয়সে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া রাসেল হয়তো তার কর্মের দ্বারা বাঙালি জাতির ইতিহাস ও উত্থানে দাগ কেটে রেখে যেতে পারেনি , তবে তার কয়েক বৎসরের জীবন বাঙালি জাতির ইতিহাসকে এতই প্রভাবিত করেছে যে কখন তিনি বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের সিংহাসন থেকে নেমে এসে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন , তা আমরা বুঝতেই পারিনি ।
=====শেখ রাসেল রচনা শুরু=====
ভূমিকাঃ
রাসেল হল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদরের একমাত্র ভাই, আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের একমাত্র ছেলে। তার বয়স যখন ১১ বছর তখন সে ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে অল্প বয়সে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সে বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশের একটি বড় কর্মের মাধ্যমে বাঙালি জাতির কাছে ইতিহাসে নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল করতো। তার বয়স হবার আগেই সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে। সে ছিল আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়নের মনি। সে তার ছোট ভাইকে অনেক ভালোবাসতো। সেক রাসেলের মৃত্যুর বর্ণনা শুনলে যে কোন মানুষের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরে। কারণ সে তো ছিল একদম নিষ্পাপ একটা বাচ্চা তার তো কোন দোষ ছিল না।
বাঙালি জাতির অন্দরমহল থেকে যুগে যুগে আবির্ভাব ঘটেছে অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্বের । তাদের কাউকে বা আমরা যথাযথ সম্মান দিয়ে চিরকাল মনে রেখেছি , আবার অনেকেই হারিয়ে গেছেন বিস্তৃতির অতল গহবরে । তবে বাঙালি জাতি বর্তমানে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে , তার পেছনে কিছু না কিছু অবদান রয়েছে সেই সকল ব্যক্তিদেরই।তারা প্রত্যেকেই হয় তাদের জীবন দিয়ে কিংবা তাদের কর্ম দিয়ে বাঙালি জাতিকে যুগিয়ে গিয়েছেন মাথা তুলে দাঁড়ানোর রসদ । আমাদের দেশে বাঙালি জাতির প্রধান নেতা বললেই যে মানুষটির নাম সর্বপ্রথম মাথায় আসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ১৯৭৫ সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম ও করুণ পরিণতির কথা আমরা সকলেই জানি । স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করি তার বীর পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামালকে । তবে প্রায়শই যাকে আমরা ভুলে যাই তিনি হলেন ওই একই পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য , বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল । মাত্র ১১ বছর বয়সে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া রাসেল হয়তো তার কর্মের দ্বারা বাঙালি জাতির ইতিহাস ও উত্থানে দাগ কেটে রেখে যেতে পারেনি , তবে তার কয়েক বৎসরের জীবন বাঙালি জাতির ইতিহাসকে এতই প্রভাবিত করেছে যে কখন তিনি বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের সিংহাসন থেকে নেমে এসে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন , তা আমরা বুঝতেই পারিনি ।
শেখ রাসেলের জন্ম সালঃ
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল তার জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ই অক্টোবর সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে ৩২ নাম্বার বাসা বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেছেন। শেখ রাসেলের বড় বোন শেখ হাসিনা শেখ রাসেলের জন্মের পর তাকে গোসল করানোর শেষে তার নিজের ওড়না দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিবে। শেখ রাসেল ছোটবেলা থেকে অনেক শান্তশিষ্ট ও অনেক বুদ্ধিমান ছিল। সে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্মগ্রহণ করলে ও সে সমস্ত জাতির সন্তান। তার জন্মে সমগ্র জাতির মনের আনন্দ বইয়ের এনেছিল। তার জন্ম হয়েছিল বড় আপা শেখ হাসিনার ঘরে । সমগ্র বাড়ি জুড়ে সেদিন আনন্দের জোয়ার । জন্মের কিছুক্ষন পর শেখ হাসিনা এসে ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন । জন্মের সময় শেখ রাসেল চেহারায় ছিলেন স্বাস্থ্যবান । এ যেন শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারেরই আনন্দ নয় , সমগ্র জাতির আনন্দ ।
শেখ রাসেলের নামকরণঃ
শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনেও এক সুন্দর কাহিনী রয়েছে । বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও সহাবস্থানের এবং যুদ্ধের ঘোর বিরোধী এই সূত্র তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেলবিজয়ী দার্শনিক কিংবা সমাজবিজ্ঞানীই ছিলেন না , ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের নেতাও । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সমগ্র পৃথিবী যখন সম্ভাব্য একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত হয়ে আছে , তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল । এমনই মহান ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল ।
শেখ রাসেলের ছেলেবেলাঃ
শেখ রাসেলের ছেলেবেলা দেশের সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতোই বর্ণময় । জন্মের পর খুব বেশি দিন তিনি বাবার সান্নিধ্য পাননি । দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় । প্রথমে ঢাকায় থাকলেও পরে পাকিস্থানে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় । শোনা যায় বড় আপা শেখ হাসিনার সঙ্গে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়ে মাত্র দু বছর বয়সের রাসেল তার আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , সে বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকতে পারে কিনা । সামান্য কিছুদিনের জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই রাসেল কাটিয়েছিলেন তার মা এবং বোনদের কাছে । তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে । ১১ বছর বয়সে যখন তার মৃত্যু হয় তখন তিনি সেখানকারই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন ।
প্রিয় রাসেলের বাল্যকালঃ
শেখ রাসেল যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন দেশের অবস্থা উত্তপ্ত । চারিদিকে চলছিল পাকিস্তানিদের অত্যাচার। শেখ রাসেল জন্মের পর তার বাবার সান্নিধ্য খুব বেশি দিন পাননি কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যাবার কারণে। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের হাতে গ্রেফতার হন। প্রথমে তাকে ঢাকায় রাখা হলেও কিছুদিনের মধ্যে তাকে পাকিস্তানে হস্তান্তর করা হয়েছিল। সেসময় শেখ রাসেল ছিল অনেক ছোট তার বাবার সঙ্গে তার তেমন একটা সময় কাটানো হয়েছিল না।
বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন তখন তার বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রাসেল তার বাবাকে দেখতে কারাগারে গিয়েছিলেন। আর সে সময় তার বয়স ছিল দুই বছর এবং সে তার বড় বোন শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি বাবা বলে ডাকতে পারি, সে ছোট থেকেই ছিলেন অনেক বুদ্ধিমান। তার ছোটবেলাটা বেশিরভাগই কেটেছিল তার মা ও বোনদের সঙ্গে। আর ১১ বছর বয়সে যখন শেখ রাসেলের মৃত্যু হয়েছিল, তখন সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো। আর তার স্কুলের নাম ছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে ।
শেখ রাসেলের নামকরণের কাহিনীঃ
শেখ রাসেলের নামকরণের মধ্যেও একটি কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর সব সময়ই ছিলেন বিশ্বশান্তির পক্ষপাতী তিনি ছিলেন যুদ্ধের ঘোর বিরোধী তিনি সবসময় শান্তি পছন্দ করতেন। আর সেই জন্য শেখ মুজিবর ছিলেন নোবেল প্রাপ্ত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের একজন বড় ভক্ত। সেই প্রসঙ্গে বলা যাই যে, বার্ট্রান্ড রাসেল তিনি শুধুই নোবেল বিজয় দার্শনিক অথবা সমাজবিজ্ঞানীই নয়, বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন একজন যুদ্ধ বিরোধী বড় মাপের একজন ভালো নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য যখন সমস্ত পৃথিবী পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনায় সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন তখন বার্ট্রান্ড রাসেল সেই সময় যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের জন্য অন্যতম একটি মুখ হয়ে আবির্ভূত হন। আর সেই সময় শেখ মুজিবর রহমান এমন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে তার একমাত্র কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নাম তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রেখেছেন।
শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকান্ডঃ
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সেই ভয়ানক রাত সম্পর্কে কমবেশি আমাদের সবারই জানা। সেই রাতের কথা মনে হলে যেন মনের ভিতর কেঁপে ওঠে। সেই রাতে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরিবার নির্মমভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। আর সেই সময়ের নির্মম ঘটনা আমরা বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা জানতে পারি। সেই যুদ্ধের সময় শেখ রাসেলের বয়স ছিল ১১ বছর। সে কিছু জানতোই না বুঝতো না। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর ঢাকা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসাতে বা ভবনে থাকতো সেই বাসায় ট্যাংক ঘেরাও করে বঙ্গ বন্ধুর স্বপরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আর তার মধ্যে ছিল আমাদের ছোট্ট আদরের শেখ রাসেল। সেও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিল।
সেই রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম পরিণতির কথা আমরা সকলেই কম বেশি জানি । একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা সেই দিন রাতে শেখ মুজিবের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন ট্যাংক দিয়ে গিলে ফেলেন । সেইদিন প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু , এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয় । শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিতুল ইসলামের কথা অনুযায়ী , রাসেল দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন , জানতে চান সেনারা তাকেও মারবে কিনা । এমতাবস্থায় একজন সেনা কর্মকর্তা মহিতুলকে এসে মারলে রাসেল তাকে ছেড়ে দেয় । সে কাঁদতে থাকে থাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য । সেই সময় একজন ঘাতক রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে ।
শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু হওয়ার কারণঃ
শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু হওয়ার কারণ, সে কিভাবে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছিল,তা জানতে হলে আপনাদের তার ছোটবেলার দিনগুলো তে ফিরে যেতে হবে। সেই ইতিহাসে যতোটুকু জানা গেছে শেখ রাসেল সেই সময় ছিল অনেক ছোট ও নিষ্পাপ ভোলা ভোলা কর্মকাণ্ডের একট নিষ্পাপ ছোট বাচ্চা। রাসেল যখন ছোট ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটি কুকুর ছিল সেই কুকুরের নাম ছিল টমি তাকে টমি বলে ডাকা হতো। একদিন শেখ রাসেল সেই টমি বা কুকুরের সঙ্গে খেলা করছিল। আর খেলা করার সময় সে কুকুরটি একটু জোরে ডেকে উঠেছিল। সেই সময় আমাদের ছোট্ট শেখ রাসেল ভয় পেয়ে কান্না করে দিয়েছিল, সে মনে করেছিল টমি তাকে বকা দিচ্ছে।সে দৌড়ে তার বোন শেখ রেহেনার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তার এই ভোলা ভোলা সরলতার কারণেই সেই আমাদের বন্ধু হয়ে উঠে।
শেখ রাসেলের সঙ্গে ঘটা এক সুন্দর কাহিনীঃ
শেখ রাসেলের বয়স কম হলেও তার হৃদয় এবং মন ছিল অনেক উদার। শেখ রাসেল সব সময় মানুষের উপকার করার জন্য আগ্রহী থাকতেন। শেখ রাসেলের সাধারণ মানুষের প্রতি ছিল গভীর ভাবে ভালোবাসা। শেখ রাসেলের সকল আচার আচরণের মধ্যে সরলতা এবং ভালো কর্মকান্ড এবং দায়িত্ববোধ বোঝা যেত। শেখ রাসেলের ছোটবেলার এক সুন্দর কাহিনী শুনুন। ৩২ নম্বর বাসার পাশের বাড়িতে একটি ছোট বাচ্চা ছিল তার নামও ছিল রাসেল। শেখ রাসেল সেই বাচ্চার সঙ্গে খেলাধুলা করত। আর সেই সময় শেখ রাসেল দেখল, তার পাশের বাসায় একটি বয়স্ক মহিলা ভিক্ষা করতে এসেছিল।
সেই বাড়ি থেকে বলা হল, ভিক্ষা দেব না তুমি যদি বাড়ির একটা কাজ করে দাও তাহলে তোমাকে এক টাকা দিব। তারপর বয়স্ক মহিলাটি সেই কাজ করে দিল কিন্তু তাকে শুধু ২৫ পয়সা দেওয়া হয়েছিল। তারপর সেই বয়স্ক মহিলাটি কান্নাকাটি করতে করতে সেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। আর সেই অবস্থা দেখে শেখ রাসেলের অনেক কষ্ট হল। তারপর শেখ রাসেল সেই বয়স্ক মহিলাটিকে পরম যত্নে তুলে এনে তার গেটের সামনে বসিয়ে দিল। এবং সে বলল আপনি এখানে বসুন আমার আব্বা আসুক সে ,বঙ্গবন্ধু আসলে কথা বলিয়ে দিবে।
সে বয়স্ক মহিলাটিকে বলল আপনি এখানে বসুন আমার আব্বা আসুক তিনি আপনার বিচার করে দিবেন। এবং বাসা থেকে সেই বয়স্ক মহিলাটিকে খাবারও দেওয়া হয়েছিল। আর সে সময় ছিল অনেক শীত বয়স্ক মহিলাটি ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছিল। তারপরেও শেখ রাসেলের একই কথা যে আমার আব্বা এসে আপনার বিচার করে দিবে। আর এই গল্প থেকে বোঝা যায় যে, তার অল্প বয়স থেকে মানুষের প্রতি ভালোবাসা। আর তাই বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিন শেখ রাসেল তাদের হৃদয়ে থাকবে।
উপসংহারঃ
শেখ রাসেল হল আমাদের বাঙালি জাতির একজন যুগোত্তীর্ণ । শেখ রাসেলের মধ্যে দিয়ে আমাদের বাঙালি জাতি তার ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে রাখতে পারে।এবং ছোটবেলার স্মৃতিতে ফিরে যাই। আর তার সঙ্গে আমাদের মনে পড়ে যায় সেই নিষ্পাপ শেখ রাসেলের মৃত্যুর নির্মম ইতিহাস যা আমাদের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে ।দোষ তো ছিল না কিছুই তার কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তাকে ছোটবেলায় শহীদ হতে হয়। আর তার স্মৃতি আমাদের মনের মধ্যে সব সময় বিরাজমান থাকবে। আর তার জন্য তার স্মৃতিতে বাংলাদেশে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন, শেখ রাসেল শিশু পার্ক,ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল শিশু পরিশোধ ইত্যাদি। আর এই সকল কিছুর মধ্যেই শেখ রাসেল আমাদের মধ্যে আজীবন বেঁচে থাকবে।
শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু’ শীর্ষক এই প্রবন্ধে আমরা শেখ রাসেলের জীবন সম্পর্কে সীমিত শব্দের পরিসরে যথাসম্ভব বিস্তার পূর্বক আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভাল লেগেছে এবং এই প্রতিবেদন শেখ রাসেলের জীবন সম্পর্কে, তথা তাঁর বাঙালি জাতির বন্ধু হয়ে ওঠা সম্পর্কে আপনার যাবতীয় কৌতুহল নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে।
=====শেখ রাসেল রচনা সমাপ্তি=====
দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’। এই নামকরণে মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। কিন্তু মাত্র দেড় বছর বয়স থেকেই প্রিয় পিতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের একমাত্র স্থান হয়ে ওঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তবে সাত বছর বয়সে ১৯৭১ সালে তিনি নিজেই বন্দি হয়ে যান।
শেখ রাসেলের ভুবন ছিল তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালকে ঘিরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
১৯৬৪
‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজো ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজো ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিল রাসেল।’ সূত্র: শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’
'দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল' শিরোনামে শেখরাসেলডটগভডটবিডি ওয়েবসাইটে শেখ রাসেলের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ প্রকাশ করা হয়েছে। বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য সেটু হুবহু তুলে ধরা হলো-
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’। এই নামকরণে মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। কিন্তু মাত্র দেড় বছর বয়স থেকেই প্রিয় পিতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের একমাত্র স্থান হয়ে ওঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তবে সাত বছর বয়সে ১৯৭১ সালে তিনি নিজেই বন্দি হয়ে যান।
১৯৬৬
কারাগারে দেখা করার সময় রাসেল কিছুতেই তাঁর বাবাকে রেখে আসবে না। এ কারণে তাঁর মন খারাপ থাকতো। কারাগারের রোজনামচায় ১৯৬৬ সালের ১৫ জুনের দিনলিপিতে রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “১৮ মাসের রাসেল জেল অফিসে এসে একটুও হাসে না- যে পর্যন্ত আমাকে না দেখে। দেখলাম দূর থেকে পূর্বের মতোই ‘আব্বা আব্বা’ বলে চিৎকার করছে। জেল গেট দিয়ে একটা মাল বোঝাই ট্রাক ঢুকেছিল। আমি তাই জানালায় দাঁড়াইয়া ওকে আদর করলাম। একটু পরেই ভিতরে যেতেই রাসেল আমার গলা ধরে হেসে দিল। ওরা বলল আমি না আসা পর্যন্ত শুধু জানালার দিকে চেয়ে থাকে, বলে ‘আব্বার বাড়ি’। এখন ধারণা হয়েছে এটা ওর আব্বার বাড়ি। যাবার সময় হলে ওকে ফাঁকি দিতে হয়।”
১৯৬৭
কারগারের রোজনামচায় ১৯৬৭ সালের ১৪-১৫ এপ্রিলের অন্যান্য প্রসঙ্গ ছাড়াও রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “জেল গেটে যখন উপস্থিত হলাম ছোট ছেলেটা আজ আর বাইরে এসে দাঁড়াইয়া নাই দেখে আশ্চর্যই হলাম। আমি যখন রুমের ভিতর যেয়ে ওকে কোলে করলাম আমার গলা ধরে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে কয়েকবার ডাক দিয়ে ওর মার কোলে যেয়ে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে ডাকতে শুরু করল। ওর মাকে ‘আব্বা’ বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ব্যাপার কি?’ ওর মা বলল,“বাড়িতে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে কাঁদে তাই ওকে বলেছি আমাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকতে।” রাসেল ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকতে লাগল। যেই আমি জবাব দেই সেই ওর মার গলা ধরে বলে, ‘তুমি আমার আব্বা।’ আমার উপর অভিমান করেছে বলে মনে হয়। এখন আর বিদায়ের সময় আমাকে নিয়ে যেতে চায় না।”
১৯৭১
১৯৭১ সালে রাসেল তাঁর মা ও দুই আপাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধানমণ্ডি ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি এবং বড় দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। মা ও আপাসহ পরিবারের সদস্যরা ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মুক্ত হন। রাসেল ‘জয় বাংলা’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাইরে তখন চলছে বিজয়-উৎসব।
১৯৭৫
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
শেখ রাসেলের ভুবন ছিল তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব, বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালকে ঘিরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
আলোর পথে শেখ রাসেলের স্মৃতি
১-এক
শেখ রাসেল, তোমার ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে এই বাংলাদেশ তোমাকে স্মরণ করছে। মায়াবী দুঃখের মুখ নিয়ে তোমার স্মৃতি ঘেরা আঙিনাগুলো আলোতে জেগে উঠছে। শ্বেত কপোতের ডানা ঝাপটানো তোমার সকাল, পুকুরে রূপালি মাছের সঙ্গে সাঁতরানো দুপুর, বিকেলে পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গণভবনের লেক মাড়ানোর গল্প অথবা সন্ধ্যা-রাতের বত্রিশ নম্বরের বাড়িটির হৈচৈ আর শাসন-বারণের নানা আদর তোমাকে জড়িয়ে রেখেছে যত্নে। তুমি নেই তাই ৩২ নম্বরের বাড়িটির অবকাঠামো তেমনি থাকলেও পাল্টেছে অনেক কিছুই। বঙ্গমাতা শেখ মুজিবের কোলে শুয়ে তোমার ঘুম, বড় বোন হাসু আপার মমতা মাখানো চেয়ে থাকা দৃষ্টি, আর ভাবিদের সঙ্গে দুষ্টামি করে তোমার দিন কখন গড়িয়ে গেল রাসেল। তোমার জন্মের পরও বঙ্গবন্ধুকে জেলে যেতে হয় বারবার। তখন তুমি ছোট ছিলে বলে সকলের চোখের মণি হয়ে ওঠো। তুমি একটু ব্যথা পেলে সকলের মন কেঁদে উঠত। সুন্দর তুলতুলে একটা শিশু কার না প্রিয় হয়। তুমি ছিলে এদেশের সকলের আপনজন।
২-দুই
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটিতে ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর তোমার জন্ম সেখানে এখন সুনসান নীরবতা। শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমাদের পাঁচ ভাইবোনের সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট্ট বাচ্চা আমাদের বাসায় ঘর আলো করে এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা বারট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে বাংলায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখেন।’ বাসার সামনের ছোট্ট সবুজ লনে ভাইবোনরা তোমার সাথে খেলায় মেতে উঠত। তোমার হামাগুড়ি দেওয়া, হাঁটার চেষ্টা সবই স্পষ্ট ছবি হয়ে আছে এখনো। শেখ হাসিনাকে ‘হাসুপা’ বলে ডাকতে তুমি। কামাল ও জামালকে ভাই, আর রেহানাকে আপু। কামাল ও জামালের নাম কখনও বলতে না। অনেক চেষ্টা করার পর ডেকেছিলে-‘কামমাল’, ‘জামমাল’। তবে সব সময় ‘ভাই’ বলেই ডাকতে তাদের। শিশুকাল থেকে চলাফেয়ার তোমার ছিল সাহসী আর সাবধানী আচরণ। তোমার অতি প্রিয় দুটি সাইকেল এখনও রয়েছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে। যে সাইকেল নিয়ে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটতো তোমার।
৩-তিন
রাসেল ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা হাসুপার অতি কাছের। অবসর সময় কাটত তাকে নিয়ে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে রাসেলের মুখের হাসি মুছে যায়। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে রাসেল তার আব্বাকে খুঁজত। আর তখন তার মা বেগম মুজিবও ব্যস্ত স্বামীর মামলা-মকদ্দমা সামলাতে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে। ফলে রাসেলের যতœ না পাওয়ারই কথা। কিন্তু শেখ হাসিনা তার কাছে থেকেছেন। বত্রিশ নম্বর বাড়ির আঙিনা জুড়ে কবুতর ঘুরে বেড়াত। আর রোজ সকালে রাসেলকে কোলে নিয়ে বেগম মুজিব তাদের খাবার দিতেন। রাসেল বড় হতে থাকলে খেলার সাথী হিসেবে কবুতরের পেছনে ছোটা আর নিজে হাতে করে খাবার দেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু ওকে কখনো কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারেননি কেউ। যেন পোষা পাখির প্রতি বাল্যকাল থেকে তার অন্তরে মমতা জেগে উঠেছিল।
বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার সময়গুলো পিতার অভাব ভুলিয়ে রাখার জন্য পরিবারের সকলের চেষ্টা থাকত নিরন্তর। বাসায় পিতার জন্য কান্নাকাটি করলে বেগম মুজিব তাকে বোঝাতেন এবং তাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। শেখ হাসিনা লিখেছেন, মাকেই আব্বা বলে ডাকতে শুরু করে। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলায় আসামি করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হলে পরিবারে নেমে আসে দুশ্চিন্তার কালো ছায়া। সে সময় রাসেলের শরীর খারাপ হয়ে যায়। যেন শিশু মন টের পায় পিতার সংকট কতটা গভীর। ১৯৬৮-৬৯ সালের দিকে সবাই যখন আন্দোলনে ব্যস্ত তখন সে বাড়ির কাজের লোকদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে। এমনিভাবে সে কাজের লোকদের সাথে ভাত খেতে পছন্দ করতে শিখেছিল। চার বছর বয়সেই সে বাড়ির পোষা কুকুর টমির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে নিয়েছিল। টমিকে সে খুবই ভালবাসতো। হাতে করে খাবার দিত। নিজের পছন্দমতো খাবারগুলো টমিকে ভাগ দেওয়া ছিল একটি কাজ। ১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারিতে প্রায় তিন বছর পর বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলে রাসেল খেলার ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ পরপরই পিতাকে দেখে আসত। পিতা বাড়ির নিচে অফিস করতেন। সারাদিন নিচে খেলা করত সে আর কিছুক্ষণ পরপর বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যেত।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভয়াল রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে পরদিন হামলার মুখে পড়ে মা’র সঙ্গে রাসেলকেও দেওয়াল টপকে পালাতে হয়। তারপর দীর্ঘ নয় মাস ধানমন্ডির ১৮ নম্বর বাড়িতে বন্দী থাকতে হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর পাহাড়ায়। তখন রাসেলের দিনগুলো কেটেছে নিরানন্দে। প্রথমদিকে রাসেল বঙ্গবন্ধুর জন্য খুব কান্নাকাটি করত। তার ওপর ভাই কামাল মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় তাকে পায়নি, সেটাও তার জন্য কষ্টকর ছিল। মনের কষ্টে চোখের কোণে সব সময় পানি থাকত তার। তবে ছোটবেলা থেকে মনের কষ্ট নিজেই বহন করতে শিখেছিল রাসেল। ১৯৭১ সালে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হলে বন্দিখানায় তার আনন্দসঙ্গী জুটেছিল। সারাক্ষণ তার পাশেই থাকত সে। একাত্তরে ঢাকায় বিমান হামলার সময় রাসেল তুলা নিয়ে এসে জয়ের কানে গুঁজে দিত। স্নেহ-মমতায় অন্তরপূর্ণ সার্থক মানুষ হয়ে উঠছিল সে।
৪-চার
শেখ রাসেল, একাত্তরে তুমি ছিলে তোমার প্রিয় সব খাবার থেকে বঞ্চিত, খেলার সাথী ছাড়াই তোমাকে বন্দীশালার জানালা দিয়ে পাকসেনাদের অস্ত্রশস্ত্র পরিষ্কার করা দেখতে দেখতে নয় মাস কাটাতে হয়েছে। যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা দেখার সুযোগ না হলেও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় তোমার ভেতর মানুষের জন্য ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল গভীর মমত্ববোধ। ১৭ ডিসেম্বর(১৯৭১) তুমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পেরেছিলে মুক্তির আনন্দ। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে শত্রু তাড়ানোর সেই উল্লাস পরিবারের সদস্যদের চোখের পানিতে ধুয়ে গেছে। তাদের দুঃখ দেখলে তোমার মন খারাপ হয়ে যেত। অবশ্য যুদ্ধ শেষে কামাল ও জামালকে পুনরায় কাছে পেয়ে পৃথিবী ঝলমল করে উঠলেও তখনও পিতাকে তুমি খুঁজে ফিরছিলে।
আরো পড়ুনঃ বাঙ্গালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন। এয়ারপোর্টে গিয়েছিলে পিতাকে আনতে। সেদিন লাখো মানুষের ঢলে পিতাকে নিয়ে তোমার খুব গর্ব হয়েছিল রাসেল? সবচেয়ে আনন্দের সেই দিনটি কেবল তোমার নয় সমগ্র বাঙালি জাতির ছিল। এজন্য তুমি যেমন পিতাকে ছেড়ে এক মুহূর্ত থাকতে চাইতে না, তেমনি আমাদের জনগণও। তুমি যেন হয়ে উঠলে জনগণের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকে এদেশের মানুষ ভালবেসেছিল নিঃস্বার্থভাবে; যেমন তুমি পিতাকে। তোমার ভালবাসার সারণিতে এখনো আমরা দাঁড়িয়ে আছি রাসেল। স্বাধীনতার পর ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে পুনরায় তোমার হাসি মুখে ঘুরে বেড়ানো শুরু হয়। সাইকেলে চড়ে তুমি ব্যস্ত হয়ে ওঠো সারা দিন। তারপর পুরানো গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ছোটছেলের সার্বক্ষণিক আনাগোনা। বিকেলে সাইকেলটাও সাথে থাকত। তোমার খুব শখ ছিল মাছ ধরার। তা ছিল খেলা। কারণ মাছ ধরে আবার ছেড়ে দিতে তুমি। নাটোরের উত্তরা গণভবনেও তোমাকে সেরকমই দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিলে। কিন্তু বাসায় তোমাকে পড়াতে গিয়ে শিক্ষককে তোমার কথাই শুনতে হতো বেশি। তোমার কথায় পড়াতে আসা শিক্ষয়িত্রীকে প্রতিদিন দুটো করে মিষ্টি খেতে হতো। মানুষকে আপ্যায়ন করতে খুবই পছন্দ করতে তুমি। টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গেলে তোমার খেলাধুলার অনেক সাথী জুটে যেত। প্রত্যেকের জন্য খাবার কিনে দিতে। বেগম মুজিব তাদের জন্য জামা-কাপড় নিয়ে যেতেন। গ্রামের শিশুদের সঙ্গে তোমার সেই মৈত্রীর বন্ধন অনেকেই এখনো স্মরণ করেন। তুমি হতে চেয়েছিলে আর্মি অফিসার। কামাল-জামালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে তার অনুপ্রেরণা জন্মেছিল।
৫-পাঁচ
পিতার সঙ্গে রাসেলের সম্পর্ক ছিল চিরন্তন পিতৃ হৃদয়ের মমতা মাখানো। পিতাকে মোটেই ছাড়তে চাইত না সে। যেখানে যেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়ে যেতেন। বেগম মুজিব তার জন্য প্রিন্স স্যুট বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ পিতা প্রিন্স স্যুট যেদিন পরতেন রাসেলও পরত। পোশাকের ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই তার নিজের পছন্দ ছিল। ছেলেবেলা থেকেই তার চরিত্রে দৃঢ়তা গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের সময় রাসেলও সেখানে যেতে পেরে আনন্দে মেতে উঠেছিল। তবে মাকে ছেড়ে কোথাও তার থাকতে খুব কষ্ট হতো। বাইরে পিতা সান্নিধ্যে থেকেও মার কথা মনে পড়লেই মন খারাপ করত সে। কারণ বঙ্গবন্ধুর অধিকাংশ সময় জেলে কেটেছে। এজন্য মাকে কেন্দ্র করে তার প্রাত্যহিক জীবন গড়ে উঠেছিল। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে কামাল ও জামালের বিয়ের অনুষ্ঠানে রাসেল ওর সমবয়সীদের সাথে মিলে রঙ খেলেছিল। বিয়ের পর সব সময় ভাবিদের পাশে ঘুরঘুর করত সে; কার কী লাগবে খুব খেয়াল রাখত। ১৯৭৫-এর ৩০ জুলাই শেখ হাসিনা জার্মানিতে স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার পর রাসেলের খুব মন খারাপ হয়ে যায়।
৬-ছয়
শেখ হাসিনা জার্মানি যাওয়ার সময় রাসেলকে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার হঠাৎ জন্ডিস হওয়ায় শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। সে কারণে বেগম মুজিব তাকে আর শেখ হাসিনার সাথে যেতে দেননি। রাসেলকে যদি সেদিন তিনি সাথে নিয়ে যেতে পারতেন তা হলে তাকে আর হারাতে হতো না। ১৯৭৫ সালের পনের আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত করা হয় ছোট্ট রাসেলকে। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় শেখ রাসেলকে। তার আগে সে বারবার বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাবো’। তৃষ্ণার্ত হয়ে পানি খেতেও চেয়েছিল। মায়ের কাছে নেওয়ার নাম করেই হত্যা করা হয় শিশু রাসেলকে। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিনের স্বল্পায়ু জীবন ছিল তার। আজ জন্মদিনে তাকে আমরা স্মরণ করছি- একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুর অন্তরবেদনা, তার মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বোঝার জন্য। প্রাণোচ্ছল শিশু শেখ রাসেল মানুষকে ভালবাসতে শিখেছিল, বঙ্গবন্ধুর আনন্দের সঙ্গী ছিল আর বাঙালির চিরন্তন পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে তার অনাবিল উচ্ছ্বাস ছিল অফুরন্ত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ রাসেল পিতা-মাতা ও অন্যদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুরতার নির্মম শিকার হয়েছিল তা এখনো বিশ্ব মানবতাকে বিচলিত করে। আমরা সেই পৈশাচিকতা থেকে আলোর পথে বের হয়ে আসতে চাই। তাই স্মরণ করি শেখ রাসেলকে।
শেষ কথাঃ শেখ রাসেল রচনা - দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী
উপরের আলোতে খুব ভালোভাবে শেখ রাসেল রচনা - দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়লে আপনি শেখ রাসেল রচনা - দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী এ পোষ্টটি খুব ভালো ভাবে জেনে নিতে পারবেন। তাই সম্পূর্ন পোষ্টটি পড়ুন। এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই, এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। শেখ রাসেল রচনা - দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল এর জীবন কাহিনী এরকম আরো অনেক নতুন নতুন আর্টিকেল দেখতে চাইলে এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ার সুযোগ করে দিন এবং কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url