তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তুলসী পাতার গুনাগুন

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে হিন্দু ধর্মের বহুল পরিচিত তুলসী পাতার  উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তুলসী পাতার গুনাগুন এ সম্পর্কে সম্পূর্ন আলোচনা করবো। তুলসী পাতা/তুলসী গাছ হিন্দুধর্মের একটি অঙ্গ। তুলসী পাতা ছাড়া হিন্দুধর্মের কোনো পূজাই হয় না। হিন্দুধর্মের যে কোনো পূজাতে তুলসী পাতার ব্যবহার খুব ভালো ভাবে পরিলক্ষিত হয়। 

বাড়িতে তুলসী গাছে গড় হয়ে প্রণাম করছে বাঙালি বধূ। তার পরণে গরদের লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। এমন দৃশ্য বাঙালির মানসপটে যেন সেই প্রাচীন যুগ থেকেই আঁকা রয়েছে।এমন দৃশ্য আমাদের মাঝে উপস্থাপনে গণমাধ্যমেরও জুড়ি নেই। নাটক-নবেল থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রেও উঠে এসেছে এমন দৃশ্য।


তাছাড়া হিন্দু-মুসলিম থেকে শুরু করে সবার বাড়িতেই তুলসী গাছ থাকেই। এটি একটি ঔষধি গাছ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। মোটামুটি সবাই গাছটির ভেষজ গুন সম্পর্কে জানে এবং ছোটখাট অসুখে বাড়িতে বসেই এ গাছের পাতা দিয়ে টুকটাক ওষুধ বানিয়ে নেয়।

তুলসী একটি ঔষধি গাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী এর ইংরেজি নাম Holy basil এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ocimum basilicum Linn.   

তুলসী আমাদের দেশে জন্মানো খুবই সাধারণ একটি উদ্ভিদ। তবে সাধারণ হলেও অসাধারণ গুণ তুলসীর মধ্যে বিদ্যমান। হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে লাগে বলে বাড়িতে-মন্দিরে তুলসী গাছ লাগিয়ে থাকে। হিন্দু দেবতা নারায়ণের প্রসাদ লাভের জন্য তাঁর চরণে একটি করে তুলসী পাতা দেওয়া হয়।

তুলসী পরিচিতি

তুলসী সাধারণত একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২-৪ ফুট উঁচু বড় বিরুৎ বা ছোট গুল্ম জাতীয় কটু তিক্তরস যুক্ত উদ্ভিদ। এর মূল কান্ড কাষ্ঠল, পাতা ২-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫ টি পুষ্পদন্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদন্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে।

এর পাতায় এক ধরনের সুগন্ধী তেল থাকে তাই তুলসী গাছ সুগন্ধযুক্ত। এর বীজ চ্যাপ্টা, মসৃণ ও ফিকে লাল। সারাবছর এর পাতা সংগ্রহ করা যায়।

সাদা তুলসী গাছটাই সাধারণত চোখে পড়ে তবে কালো তুলসী গাছ ও দেখা যায়, যাকে বলা হয় কৃষ্ণ তুলসী। জুলাই আগস্ট বা নভেম্বর ডিসেম্বরে এতে মঞ্জুরি দেখা যায়। ভারতে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা হয়।  

তুলসী বিভিন্ন রকম ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাংগাস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। পাতা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। অনেকে বেটে রসটা খান। তুলসী পাতার চা বেশ সুস্বাদু। আসুন জেনে নেয়া যাক শরীরের জন্য তুলসী পাতার উপকারীতা।

তুলসী পাতার  উপকারিতা

তুলসি পাতা উপকারী একথা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু তুলসিপাতা খেলে কোনো উপকারগুলো পাওয়া যায় সেকথা অনেকেরই অজানা। ওষুধ হিসেবে তুলসিপাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। এটি নানা গুণে অনন্য বলেই হাজার বছর ধরে যোগ আছে ওষুধের তালিকায়। জেনে নিন তুলসি পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-

তুলসী পাতার গুণাগুণ হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান। বাসার বারান্দায় যেখানে আলো–বাতাস চলাচল করে, সেখানে লাগিয়ে রাখতে পারেন উপকারী তুলসীগাছ।

শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষের ঠান্ডা, সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে তুলসী পাতা মহৌষধ। বাচ্চার সর্দি-কাশি থাকলে আধা চা–চামচ মধুর সঙ্গে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ালে কাশি কমে যাবে। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলা এক গ্লাস পানিতে তুলসী পাতা, আদা ও চা পাতা ভালো করে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করুন, আরাম পাবেন। এ ছাড়া মাথাব্যথা কমাতে তুলসীর চা অনেক কার্যকরী। তুলসী পাতা ফুটিয়ে গড়গড়া করলে গলাব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।

বেশির ভাগ দেশে তুলসীকে মানসিক চাপমুক্ত করার একটি অসাধারণ ঔষধি হিসেবে ধরা হয়। তুলসীর ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এ উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তুলসী শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
তুলসি পাতার রয়েছে বহু গুণ। এ ভেষজ উপাদানটি ঠাণ্ডা প্রতিরোধে অনেকে সেবন করলেও অন্যান্য গুণগুলো অনেকেরই জানা নেই। এ লেখায় তুলে ধরা হলো তেমন কিছু গুণের কথা।  এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

১. পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷

২. জ্বর হলে পানির মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটি দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে ৷

৩. কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ এতে উপকার পাবেন৷

৪. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪/৫ বার তুলসী পাতা চেবান৷

৫. ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান কমে যাবে৷

৬. শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না৷

৭. ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য এছাড়া ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান৷

৮. চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।

৯. ডায়রিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।

১০. শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।

১১. যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

১২. সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।

১৩. নিয়মিত তুলসীর রস পানে হৃদরোগেও উপকার পাওয়া যায়।

১৪. চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।

১৫. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ৷

১৬. ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে ৷

১৭. ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷

১৮. বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান ৷

১৯. প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন। উপকার পাবেন ৷

২০. ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান ৷

২১. তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।

২২. কোনো কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়।

২৩. তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।

২৪. তুলসি পাতার রসে লবণ মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।

২৫. তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়। এছাড়াও তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ।

২৬. মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।

তুলসী পাতার উপকার সম্পর্কে আরো বিশদ ভাবে বলতে গেলে- আরো অনেক কিছুই বলা যায়। যেমন- 

শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাঃ
ঠান্ডা লাগলে তুলসী পাতার ব্যবহার আশীর্বাদের মতো কাজ করে। গলার সব রকম সমস্যায় তুলসী পাতা ব্যবহৃত হয়।

হার্টের অসুখঃ
তুলসী পাতায় আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদান গুলো হার্টকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত রাখে সহায়তা করে। তুলসী পাতা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তুলসী পাতা হার্টের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। কেননা হার্টের রোগ জন্ম দেয় হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরলের। তুলসী পাতার দ্বারা রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করা যায় ও হার্ট অ্যাটাক রোধ করা যায়। হার্টের অন্যান্য সমস্যাও সহজে রোধ করতে পারে তুলসী পাতা।

পেটের সমস্যায় তুলসী পাতার উপকারঃ
পেটের সমস্যায় তুলসী পাতা মহৌষধ। পেটব্যথা, অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে তুলসী পাতা দারুণ কার্যকরী। পেটে আলসারের বিরুদ্ধেও তুলসী পাতা ভালো কাজ করে। পেটে ব্যথা হলে ২০ মিলি পানিতে তুলসী পাতা ভালো করে ফুটিয়ে ১০ মিলি কমিয়ে পান করুন। এতে পেটব্যথা ও হাইপার অ্যাসিডিটি খুব সহজে কমে যায়।

মানসিক চাপঃ
তুলসীর ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এই উপাদান গুলো নার্ভকে শান্ত করে। এছাড়াও তুলসী পাতার রস শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

মাথা ব্যাথাঃ
মাথা ব্যাথা ও শরীর ব্যথা কমাতে তুলসী খুবই উপকারী। এর বিশেষ উপাদান মাংশপেশীর খিচুনী রোধ করতে সহায়তা করে।  

বয়স রোধ করাঃ
ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেন্সিয়াল অয়েল গুলো চমতকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের হিসেবে কাজ করে যা বয়সজনিত সমস্যা গুলো কমায়। তুলসী পাতাকে চির যৌবন ধরে রাখার টনিক ও মনে করেন কেউ কেউ।

রোগ নিরাময় ক্ষমতাঃ
তুলসী গাছের ঔষধি গুণাবলী সমৃদ্ধ গাছ। তুলসীকে নার্ভের টনিক বলা হয় এবং এটা স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য বেশ উপকারী। এটি শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মাঘটিত সমস্যা দূর করে।তুলসী পাতা পাকস্থলীর ও কিডনীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

পোকার কামড়ঃ
তুলসী পাতা হলো প্রোফাইল্যাক্টিভ যা পোকামাকড় কামড় দিলে উপসম করতে সক্ষম। পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার তাজা রস লাগিয়ে রাখলে পোকার কামড়ের ব্যথা ও জ্বলা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।

ত্বকের সমস্যাঃ
তুলসী পাতার রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এছাড়াও তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগালে ত্বকের যে কোনো সমস্যায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে এবং সেখানে কোন দাগ থাকবে না ৷ ত্বকের যত্রনে জন্যও তুলসী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে, যা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। কেউ কেউ আবার তুলসী পাতাকে যৌবন ধরে রাখার টনিকও মনে করেন। তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এ ছাড়া ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে এবং সেখানে কোনো দাগ থাকবে না।
তুলসীতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো চোখের চুলকানি, অঞ্জনি, পিচুটিজাতীয় যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসী পাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি এবং গ্লুকোমার মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে।

গলা ব্যথা দূর করেঃ
গলা ব্যথার সমস্যায় ভুগলে আস্থা রাখুন তুলসি পাতায়। কারণ এই সমস্যা দূর করতে তুলসি পাতার জুড়ি মেলা ভার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতেও তুলসি পাতা বেশ উপকারী। করোনা মহামারির এই সময়ে তাই নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কয়েকটি তুলসি পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
ক্যান্সার এক মরণঘাতি অসুখের নাম। এই অসুখ দূরে রাখতেও সাহায্য করে তুলসি পাতা। এই পাতায় আছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এতে আরও আছে ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন। এসব উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে কার্যকরী। অগ্নাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয় তা দূর করতেও তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। পাশাপাশি দূরে রাখে ব্রেস্ট ক্যান্সারও। 

তুলসী পাতা রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল দুটোই কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে খুব সহজেই আপনি ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ক্যানসার প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা খুবই উপকারী। তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান, যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। তুলসী পাতায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক অ্যাসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। অগ্ন্যাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয়, তা দূর করতেও তুলসী উপকারী। ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করতেও তুলসী পাতা খুব কার্যকরী।

ডায়াবেটিস দূরে রাখেঃ
তুলসি পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসি পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। তুলসি অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসিতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়বেটিস রোধ করতে কার্যকরী।

তুলসী পাতার  অপকারিতা

তুলসি পাতা উপকারী। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাওয়া বা না খাওয়াই উত্তম। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতার অপকারিতা, কোন কোন ক্ষেত্রে তুলসি পাতা এড়িয়ে চলবেন-

গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময় ঃ
সামান্য তুলসি পাতা খেলে তা ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে এসময় নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসি এড়িয়ে চলাই উত্তম। এঅতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে তা নারীর ক্ষেত্রে হতে পারে বন্ধ্যাত্বের কারণ। তাই পরিমিত গ্রহণ করতে হবে।

রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ
তুলসি পাতা অতিরিক্ত খেলে তা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা। যেকোনো সার্জারির দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসি পাতা খাওয়া বন্ধ রাখুন। 

নিম্ন রক্তচাপঃ
তুলসি পাতায় থাকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। তাই কারও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসি পাতা না খাওয়াই ভালো। এই ক্ষেত্রগুলোতে সতর্ক থাকলেই তুলসি পাতা খাওয়া নিরাপদ। এর অনন্য সব উপকারিতার জন্য নিয়মিত খেতে পারেন।  

সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে যেসব উপকার পাবেন 

তুলসী পাতার ঔষধি গুণ কারও অজানা নয়। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। ফলে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায় শরীর। নিয়মিত তুলসী পাতার চা পান করলে সর্দি-কাশির ধাত কমে। তুলসীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি অকাল বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে দারুণ লাভ পাবেন।

সর্দি-কাশিতে : ঠাণ্ডা লাগলে এবং গলায় ব্যথা হলে খালি পেটে তুলসীর চা পান করলে আরাম পাবেন। তাছাড়া খালি পেটে নিয়মিত কাঁচা তুলসী পাতা খেতে পারেন। এটির প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে বুঝতে পারবেন।

ডিটক্সিং প্রপার্টি : প্রতিদিন তুলসী পাতা খেলে শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের হয়ে যায়। নিয়মিত তুলসী খেলে হজমশক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের রোগের সম্ভাবনা কমে।


সুন্দর ত্বক : খালি পেটে তুলসী গ্রহণ করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। ত্বক দাগহীন ও উজ্জ্বল হয়। তবে এক-দুই সপ্তাহ নয়, টানা কয়েক মাস খেলে তবেই সেই প্রভাব দেখতে পারবেন।
স্ট্রেস : তুলসী পাতা খেলে মানসিক চাপ কমে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যাডাপ্টোজেন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই সহায়ক বলে মনে করা হয়।

তুলসীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি অকাল বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে দারুণ উপকার পাবেন।

ভারতে সাধারনত চার ধরনের তুলসী দেখা যায়। যথা-  

  • রাম তুলসী 
  • কৃষ্ণ তুলসী
  • ভানা তুলসী
  • কাপুর তুলসী   

এছাড়াও আপনি যদি বাস্ততে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনি তুলসী প্রায় সবসময়ই বাড়ির জন্য সেরা ১০ টি গাছের তালিকায় পাবেন। তাই আপনার একটি বিস্তীর্ণ বাগান হোক বা একটি ছোট বারান্দা এলাকা, আপনি সহজেই তুলসি গাছের জন্য একটি জায়গা েখুজে নিতে পারেন, যা বৃদ্ধি করাও সহজ। এই ব্লগে আপনি তুলসী গাছের বৃদ্ধি এবং যত্ন নেওয়ার টিপসও শিখবেন। 

তুলসী গাছ সম্পর্কে দ্রুত তথ্য ঃ      

এখানে তুলসী গাছ সম্পর্কে কিছু দ্রুত তথ্য রয়েছে। 

বিশেষ 

বিস্তারিত 

বোটানিক্যাল নাম Ocimum Tenuiflorum, Ocimum Gratissimum
ইংরেজি নাম পবিত্র পুদিনা
উদ্ভিদের প্রকার ভেষজ গুল্ম
প্রস্ফুতিট মাসমৌসুমী
তুলষী ফুলের রঙসাদা বা বেগুনি 
স্থানীয় এলাকা ভারত এবং অন্যান্য দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলি  
মাটির PHঅভিযোজনযোগ্য
মাটির ধরণ ভালো নিষ্কাষন সহ বেলে, আর্দ্র দোআঁশ
সুর্যালোকসম্পাতপূর্ণ সূর্য
  
তুলসী পাতার উপকারিতা পাওয়ার জন্য তুলসী গাছের যত্নও নিতে হবে। শুধু সুবিধা নিলে হবে না। আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি ফাকা কোনো স্পেস থাকে তাহলে সেখানে তুলসী ফুলের চারা রোপন করতে পারেন বা তুলসী গাছ লাগাতে পারেন। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে মাটি টি জৈব দোআাঁশ মাটি হতে হবে। তাহলে তুলসী গাছ খুব ভালো মতোন বেড়ে উটবে। ও তুলসী পাতা গুলোও অনেক বড় হবে। আর নিয়মিত জল দিতে হবে তুলসী গাছে।           

শেষ কথাঃ তুলসী পাতার  উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তুলসী পাতার গুনাগুন    

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তুলসী  গাছ অতিপবিত্র। প্রতিদিনের গৃহ দেবতার পূজোয় বা ভোগে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়। তবে শুধু পুজার কাজেই নয় রোগ নিরাময়ে তুলসী পাতার জুড়ি নেই। আধুনিক চিকিৎসা আসার আগে প্রাকৃতিক ওষুধ গুলোতেই নির্ভর করতে হয়েছে মানুষকে। যে কোন অসুখে প্রকৃতি থেকে নানা উপাদান নিয়ে ওষুধ তৈরি করে খেতে হতো। সে সময় এসব ওষুধের কার্যকারিতা কেমন ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতি থেকে যে সব উপাদান নিয়ে ওষুধ খাওয়া হতো তা ব্রেন সেলের জন্মহার বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতো।ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতো খুব সহজেই। তাইতো সে সময়কার অনেক ওষুধই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে।তুলসী গাছের পাতা, বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতি প্রয়োজনীয়। ঔষধিগুণের এই তুলসী বিভিন্ন রোগ সারাতে কাজ করে। ফুসফুসের দুর্বলতা, কাশি, কুষ্ঠ, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বর, চর্মরোগ, বক্ষবেদনা ও হাঁপানি, হাম, বসন্ত, কৃমি, ঘামাচি, রক্তে চিনির পরিমাণ হ্রাস, কীটের দংশন, কানব্যথা, ব্রংকাইটিস, আমাশয় ও অজীর্ণে তুলসী দিয়ে তৈরি ওষুধ বিশেষভাবে কার্যকর। আশা করি, তুলসী পাতার  উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তুলসী পাতার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার পরিচিত বন্ধুদের কাছে শেয়ার দিতে পারেন এবং কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।       

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কৃষ্ণ কম্পিউটারস’র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url